রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

সব শর্ত পূরণ হলে মে মাসে জিএসপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে অগ্রাধিকার সুবিধা বা জিএসপি পুনরুদ্ধারের জন্য দেওয়া শর্তগুলোর সবকটি মার্চ মাসের মধ্যেই পূরণ করতে হবে। বেঁধে দেওয়া এই ডেডলাইনের মধ্যে সব শর্ত পূরণ হলেই মে মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় শুনানিতে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবে বাংলাদেশ। এর আগে মার্চের শেষ তারিখ পর্যন্ত হওয়া অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে এপ্রিলের শুরুতেই ঢাকা সফরে আসবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি দল। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজেনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ সময়সীমার কথা জানিয়ে দিয়েছেন ঢাকার পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়কে। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিপর্যস্ত শ্রমমান পরিস্থিতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ রানা প্লাজার দুর্ঘটনার বর্ষপূর্তি হবে আগামী ২৪ এপ্রিল। এই বর্ষপূর্তির সময় দেশের শ্রম পরিস্থিতির কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা খতিয়ে দেখবে কানাডাসহ ইউরোপের দেশগুলো। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দৃষ্টিও এই বর্ষপূর্তির দিকে রয়েছে বলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমমান, অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, ভবনের নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকারের মতো চারটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি খতিয়ে দেখা হবে। জানা যায়, তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রম অধিকার ও কর্মপরিবেশ না থাকার অভিযোগ তুলে গত বছরের ২৮ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপির আওতায় পোশাকশিল্প না থাকার পরও আসে এ কঠোর সিদ্ধান্ত। এর এক মাসের মাথায় ২০ জুলাই বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে ইউএসটিআর কার্যালয় থেকে একটি রূপরেখা ঘোষণা করা হয়। ১৬ শর্তের ওই রূপরেখার নাম দেওয়া হয় বাংলাদেশ অ্যাকশন প্ল্যান। এতে শ্রম, অগ্নি, ভবন পরিদর্শক বৃদ্ধি, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পরিদর্শন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা, কার্যকরী পরিদর্শনের জন্য বাজেট প্রদান, আইএলওর সহযোগিতায় ওয়েবসাইটভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি, সিআইএফ, এফএসসিডি ও ডিওএল তাদের বিদ্যমান হটলাইনের কার্যকারিতা নিশ্চিতকরণ, সংশোধিত শ্রম আইনের একক মৌলিক ইংরেজি অনুবাদ প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, রেবেকা গার্মেন্টের চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহাল, আমিনুল হত্যার অগ্রগতি, বিসিডব্লিউএস এবং সেফের নিবন্ধন ও পুনর্নিবন্ধনের অগ্রগতি, ইপিজেডকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, বিদ্যমান শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে সংশোধন করা, শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতা ও দরকষাকষির অধিকার নিশ্চিত, বিদ্যমান শ্রম আইন ইপিজেডে প্রয়োগ, চিংড়ি খাতে শ্রমিকদের সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করার শর্ত দেওয়া হয়। অন্যদিকে রানা প্লাজা ধসের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ট্রেড কমিশনার ক্যারেল ডি গুট বাংলাদেশ সরকার, গার্মেন্ট মালিক পক্ষ ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও একই সঙ্গে তাদের প্রতি যেন দায়িত্বশীল আচরণ করা হয় তা নিশ্চিত করতে ‘সাসটেইন্যাবিলিটি কমপ্যাক্ট’ স্বাক্ষর করেন। এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মূলত তিনটি প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়। এক. ২০১৩ সালের মধ্যেই একটি নতুন শ্রম আইন তৈরি করা, যেখানে শ্রমিকরা ইউনিয়ন করার স্বাধীনতা পাবে। দুই. ২০১৩ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে আরও ২০০ পরিদর্শক নিয়োগ করা। তিন. ২০১৪ সালের জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে ভবনের নিরাপত্তা এবং অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্কপ্ল্যান ও ইউরোপের ‘সাসটেইন্যাবিলিটি কমপ্যাক্ট’ বিষয়ে সমন্বয় সভা হয়েছে বৃহস্পতিবার। এতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও শ্রমসচিবের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান, কানাডা, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, রাষ্ট্রদূতরা তিন সচিবকে মালিকদের অনীহার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। ওয়াশিংটন যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব : রবিবার ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। তিনি সেখানে ওবামা প্রশাসনের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিশেষ করে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি। এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতের সম্ভাবনা আছে পররাষ্ট্র সচিবের। তার সিরিজ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি জিএসপি ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানও তুলে ধরা হবে।

সর্বশেষ খবর