পাঁচ বছর আগে খুলনায় ইলিশ মাছ বিক্রি করলেও রতনকৃষ্ণ এখন রীতিমতো অর্থোপেডিক্স সার্জন। দেয়াল ফুটো করার ড্রিল মেশিন দিয়ে হামেশাই ছিদ্র করেন রোগীর হাড়। কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই। মাত্র অষ্টম শ্রেণী পাস রতনকৃষ্ণ দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে আসছেন। এসএসসি পাস হাসপাতালের মালিক পাইক বাবু। অপারেশনের আগে রোগীকে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দেন। এ চিত্র রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাবর রোডের ১৬/১৪ নম্বর ভবনে অবস্থিত 'ন্যাশনাল কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল'-এর। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে এ চিকিৎসাকেন্দ্রটি আবিষ্কার করে র্যাব-২-এর একটি দল। বাবুল ও রতনকে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা। বাবু-রতনকে সহযোগিতার জন্য অন্তরা শিকদার, ইমাম হাসান, জুয়েল মিয়া, মাসুম বিল্লাল ও শোভা বণিকের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং সাত দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সিলগালা করে দেওয়া হয় হাতুড়ে হাসপাতালটি। রোগীদের স্থানান্তরিত করা হয় পঙ্গু হাসপাতালে। অভিযান পরিচালনার সময় ছিলেন র্যাব-২-এর মেজর রাকিবুল ইসলাম ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা জানান, ২৫-৩০ জন দালাল পঙ্গু হাসপাতালসহ আশপাশের ক্লিনিক থেকে রোগী ভাগিয়ে ন্যাশনাল কেয়ার হাসপাতালে আনার কাজ করতেন। গভীর রাতে এ হাসপাতালের মালিক পাইক বাবু ও তার ভায়রা রতনকৃষ্ণ মিলে চিকিৎসক ছাড়া নিজেরাই রোগীদের চেতনানাশক ইনজেকশন দিতেন এবং অস্ত্রোপচারের কাজ করতেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়।
এ সময় রতনকৃষ্ণ স্বীকার করেন, তিনি রোগীর পায়ের হাড় ড্রিল মেশিন দিয়ে ফুটো করে টানা দেওয়ার কাজটি করেন। ড্রিল মেশিনটি হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে কিনে এনেছেন। মেশিনটির ওপরে লেখা রয়েছে '৩৫০০ আরপিএম'। এটি মিনিটে ৩ হাজার ৫০০ বার ঘুরবে। আনোয়ার পাশা বলেন, দেয়াল ফুটো করার এ যন্ত্র দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে রতন মানুষের হাড় ফুটো করতেন। হাসপাতাল মালিক পাইক বাবু জানান, রতন যখন হাড় ফুটো করেন, তিনি সে সময় রোগীকে চেতনানাশক ইনজেকশন দেওয়ার কাজটি করতেন। বাইরে থেকে অনেক সময় চিকিৎসক এনে অস্ত্রোপচার করানো হতো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পঙ্গু হাসপাতালে আসা নিরীহ রোগীদের পঙ্গু হাসপাতালের গেট থেকেই ভুল বুঝিয়ে আশপাশে গড়ে ওঠা কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে আসে ২৫-৩০ জনের সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। প্রতি রোগীর ক্ষেত্রে তারা পায় ৫০০ টাকা এবং মোট বিলের ৩০ শতাংশ। পঙ্গু হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা প্রায় সব প্রাইভেট হাসপাতাল এসব দালালের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।বিভিন্ন ক্লিনিকে ম্যানেজার ও পার্টনার থাকার পর পাইক বাবু নিজেই ১০ বেডের হাসপাতালের মালিক হন। কয়েক মাস আগে বর্তমান ভবনে হাসপাতালটি স্থানান্তরে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ৫০ শয্যার লাইসেন্স পান তিনি।