রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

ইলিয়াসের শূন্যতা পূরণ হচ্ছে না সিলেট বিএনপিতে

দলীয় কার্যক্রমে স্থবিরতা, বেড়েছে বিভেদ

ইলিয়াসের শূন্যতা পূরণ হচ্ছে না সিলেট বিএনপিতে

সিলেটের রাজপথে একসময় একক আধিপত্য ছিল বিএনপির। বিরোধী দলে থাকলেও বিএনপিকে সমীহ করে রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে হতো অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে। আর বিএনপির এই রাজপথের শক্তি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। প্রায় দুই বছর ইলিয়াস আলী 'নিখোঁজ' রয়েছেন। তার সঙ্গে 'নিখোঁজ' হয়ে গেছে সিলেট বিএনপির রাজপথের প্রাণশক্তি। কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না দেশের এই বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনটি। দিন দিন বিভাজন বেড়েই চলছে দলের মধ্যে। কেন্দ্র থেকে বার বার উদ্যোগ নিয়েও নেতা-কর্মীদের আন্দোলনমুখী করা যাচ্ছে না। কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ।

২০০৯ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন এম ইলিয়াস আলী। দায়িত্ব পান সিলেট বিভাগে দল পুনর্গঠনের। তার নেতৃত্বে সিলেটে ঐক্যবদ্ধভাবে শুরু হয় সরকারবিরোধী আন্দোলন। টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলন নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়ান পুরো সিলেট বিভাগ। সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও তিনি সিলেটে গড়ে তোলেন আন্দোলন। করেন লংমার্চও। সিলেটে ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে যখন সরকারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে তখন ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন তিনি। এর পর ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে সিলেটে কয়েক দিন চলে আন্দোলন। তবে ধীরে ধীরে এ আন্দোলনে পড়তে থাকে ভাটা। একসময় দলীয় কোন্দলে জর্জরিত হয়ে রাজপথে নামার শক্তিও হারিয়ে ফেলে বিএনপি। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর সিলেট বিএনপিকে গোছানোর দায়িত্ব পান একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। কিন্তু কেউই ইলিয়াস আলীর শূন্যতা পূরণ করতে পারেননি। উল্টো দলের মধ্যে বাড়ে বিভাজন। সৃষ্টি হয় নতুন নতুন দল-উপদলের। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৯ দলীয় জোটের লাগাতার আন্দোলনেও সিলেট বিএনপির কর্মসূচি ছিল ছকে বাঁধা। পুলিশ ও সরকারি দল ম্যানেজ করে তারা দায়সারাভাবে কর্মসূচি পালন করে। এ নিয়ে নেতাদের প্রতি ক্ষোভের সঞ্চার হয় কর্মীদের। নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন তারা। দলের এই বিশৃঙ্খল অবস্থার প্রতিফলন ঘটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও। বেশির ভাগ উপজেলায় কেন্দ্র ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়ান একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। দল থেকে বহিষ্কার করেও তাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দলের অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়ার লোকও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিএনপিতে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কেউই ফুল দিতে যাননি শহীদ মিনারে। সিলেটে দলের এই নাজুক অবস্থার উন্নতির জন্য সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইলিয়াস আলীর স্থলে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবনকে। উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে দল পুনর্গঠনেরও। ১৫ এপ্রিল জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের তলব করা হয়েছে ঢাকায়। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করে সিলেট বিএনপির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইলিয়াস আলী সিলেট বিভাগের একজন বলিষ্ঠ, দক্ষ, বিচক্ষণ ও জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তার নিখোঁজ হওয়ার পর নেতৃত্বের যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল তা এখনো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এ শূন্যতা পূরণ করে সিলেটে দলীয় কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে ১৫ এপ্রিল সিলেট জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করবেন।

ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা : বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে 'ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ' ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠন। গতকাল নগরীর মিরাবাজারের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় কোর্ট পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও পরদিন বাদ আসর শাহজালাল (রহ.)-এর দরগাহ মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। কর্মসূচি নির্ধারণী সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি, ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক অধ্যাপক সৈয়দ মকসুদ আলী। ইলিয়াস মুক্তি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামালের পরিচালনায় বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা দলের আবদুর রাজ্জাক, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন আশুক, সোনা মিয়া, সরোয়ার আহমদ, আনহার মিয়া, অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াছেহ চৌধুরী জুবের প্রমুখ। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন এম ইলিয়াস আলী।

 

সর্বশেষ খবর