রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

নিরাপত্তার চাদরে থাকবে সারা দেশ

পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীসহ সারা দেশে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে র‌্যাব-পুলিশ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আকাশে টহল দেবে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। সব ধরনের নাশকতা মাথায় রেখে র‌্যাব-পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। রাজধানীতে বর্ষবরণ উৎসব আনন্দঘন ও নির্বিঘ্ন করতে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চারুকলা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রসরোবরসহ ২২টি পয়েন্টে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রায় ২০০ সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। এসব সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটর করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ উপলক্ষে গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, কিছু দিন আগে কয়েকজন জঙ্গি প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়েছেন। আমরা সে বিষয়টি মাথায় রেখেই পহেলা বৈশাখে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করব। একই সঙ্গে সূর্যাস্তের আগে উন্মুক্ত সব স্থান ত্যাগ করে বাসায় ফিরে যেতে এবং বাচ্চাদের পকেটে আইডি কার্ড কিংবা ঠিকানা রাখার জন্য নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। নগরবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। তাই দেশজ সংস্কৃতির বাইরে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন না। যারা পহেলা বৈশাখের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তারা পুলিশের দিকনির্দেশনা মেনে সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। বেনজীর বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধ সেল, প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র, মঙ্গল শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে সোয়াত টিম, হারানো বাচ্চাদের ফিরিয়ে দিতে বিশেষ টিম নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

এ সময় কোনো ধরনের হ্যান্ডব্যাগ, ছুরি, কাঁচি, দাহ্যজাতীয় তরল পদার্থ, দিয়াশলাই বহন করা যাবে না। এ সময় প্রকাশ্যে ধূমপান না করার জন্যও নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। এর আগে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতরে পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বিশেষ নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ স্পর্শকাতর এলাকায় বিশেষ নজরদারি চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এসব স্থানে চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বৈশাখ উপলক্ষে যারা মাসব্যাপী অনুষ্ঠান করবে সে ক্ষেত্রেও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

অন্যদিকে, র‌্যাবের পক্ষ থেকে সারা দেশে আট হাজার সদস্য মোতায়েন করে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার রমনা বটমূল এলাকায় ৩২টি চেকপোস্টসহ চারটি রুফটপ অবজারভেশন পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে জরুরি প্রয়োজনে র‌্যাবের হেলিকপ্টার স্ট্যান্ডবাই থাকবে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এম হাবিবুর রহমান বলেন, ঢাকায় তিন হাজার ও ঢাকার বাইরে পাঁচ হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। তা ছাড়া বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কন্ট্রোল রুম, আউট পোস্ট, অবজারভেশন পোস্ট এবং চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলের মূল অনুষ্ঠানস্থলে র‌্যাব ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল দায়িত্ব পালন করবে। সঙ্গে থাকবে র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড টিম। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা হবে। ছিনতাই, কিশোর ও শিশু নিখোঁজ প্রতিরোধে প্রধান অনুষ্ঠানে কাজ করবেন ডিএমপি ও র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা। অনুষ্ঠানে আসা অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসায় ইতোমধ্যে মেডিকেল টিম ও র‌্যাব-পুলিশের আলাদা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের আগে ও প্রতিটি সড়কে সন্দেহভাজনদের করা হবে তল্লাশি। একই সঙ্গে সারা দেশের প্রতিটি বিশেষ স্থাপনায় থাকবে পুলিশি নিরাপত্তা।

রমনা উদ্যানে প্রবেশপথ : অরুণোদয় (সুগন্ধার বিপরীত), রমনা রেস্তোরাঁ, অস্তাচল (শিশু পার্ক) ও নতুন গেট (বৈশাখী অস্তাচলের মাঝে)।

রমনা থেকে বের হওয়ার পথ : উত্তরায়ণ (থাই ক্রসিং) ও বৈশাখী গেট। প্রবেশ ও বাইর : শ্যামলিমা (কাকরাইল মসজিদ) ও স্টার গেট (মৎস্য ভবন)।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশপথ : ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন গেট, টিএসসি গেট ও তিন নেতার মাজার।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বের হওয়ার পথ : চারুকলার বিপরীতে শিশু পার্ক গেট ও কালী মন্দির গেট।

বন্ধ : শিখা চিরন্তন গেট।

যেসব সড়কে যানবাহন চলবে না

১. বাংলামোটর-পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড ও টেলিযোগাযোগ ভবন ক্রসিং-রূপসী বাংলা ক্রসিং।

২. পিজি ক্রসিং-মৎস্য ভবন-কদমফুল ক্রসিং-হাইকোর্ট ক্রসিং পর্যন্ত।

৩. রূপসী বাংলা ক্রসিং-মিন্টো রোড-বেইলি রোড-হেয়ার রোড-কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং বামে মোড়-চার্চ ক্রসিং-মৎস্য ভবন ক্রসিং পর্যন্ত।

৪. নীলক্ষেত ক্রসিং থেকে টিএসসি ক্রসিং।

৫. পলাশী মোড় থেকে শহীদ মিনার হয়ে দোয়েল চত্বর ক্রসিং।

৬. বকশীবাজার থেকে জগন্নাথ হল হয়ে টিএসসি ক্রসিং।

 

সর্বশেষ খবর