রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

নির্বাচনবিহীন ছত্তিশগড়ে সহিংসতা নিহত ১১

১৬তম লোকসভার চতুর্থ দফার ভোট শান্তিপূর্ণভাবে আসাম, ত্রিপুরা, সিকিম ও গোয়া প্রদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে রক্তাক্ত হয়েছে নির্বাচনবিহীন ছত্তিশগড়ের জনপদ। এর মধ্য দিয়ে আসাম, ত্রিপুরা, সিকিম ও গোয়া প্রদেশের সাত আসনের ৭৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হলো কাল। নয় দফা ভোটের প্রথম দফা শুরু হয়েছিল ৭ এপ্রিল। ভোট গণনা হবে ১৬ মে।

কার্বি পিপলস লিবারেশন টাইগারসের ডাকা অনির্দিষ্টকালের হরতালের (বন্ধ্) মধ্যেই সকাল ৭টায় শুরু হয় আসামের তিন আসন করিমগঞ্জ, শিলচর ও পার্বত্য জেলা ডিফু কেন্দ্রে দ্বিতীয় দফার ভোট। তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে লড়াইয়ে ছিলেন মোট ৩৭ জন প্রার্থী। মোট ভোটার ২৯ লাখ ২৬ হাজার ৭৬২ জন। করিমগঞ্জ ও শিলচর আসন দুটিতে মূলত কংগ্রেস, বিজেপি এবং এআইডিএফের মধ্যে চলে ত্রিমুখী লড়াই। শিলচরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বর্তমান বিজেপি-দলীয় সাংসদ তথা সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, কংগ্রেস প্রার্থী সুস্মিতা দেব এবং এআইইউডিএফ প্রার্থী কুতুবউদ্দিন আহমেদ। করিমগঞ্জে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় কংগ্রেস-দলীয় দুবারের সাংসদ ললিতমোহন শুক্লাবৈদ্য ও বিজেপির কৃষ্ণা দাসের মধ্যে। ডিফু কেন্দ্রে লড়াই হয় কংগ্রেসের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ বীরেন সিং এঙ্গতি ও বিজেপির জয়রাম এংলেংয়ের মধ্যে। নির্বিঘ্নে ভোট সম্পন্ন করতে প্রতিটি কেন্দ্রেই জোরদার ছিল কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা।

গোয়ার উত্তর ও দক্ষিণ দুটি আসনে নির্বাচনে অংশ নেন ১৯ জন প্রার্থী। এখানে ভোটার ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৯ জন। কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিআইএসসহ বেশ কিছু আঞ্চলিক দলও অংশ নেয় গতকালের নির্বাচনে। উত্তর গোয়া আসনে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেসের রবি নায়েক, বিজেপির সাংসদ সারিপাদ নায়েক ও আম আদমি পার্টির (আপ) দত্তারাম দেশাই। দক্ষিণ গোয়া আসনে কংগ্রেসের অ্যালিক্সো রেগিনাল্ডো লরেঙ্কো, বিজেপির নরেন্দ্র সাওয়াইকার ও আপ প্রার্থী স্বাতী খেরকার। বিপুলসংখ্যক নারীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেখা যায় গোয়ার উভয় আসনে। সকালে মাসান ডে অ্যামোরিম কেন্দ্রে ভোট দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিকর। কোনো বিরতি ছাড়া ভোট শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়।

ত্রিপুরার পূর্ব ত্রিপুরা আসনে ভোটার ১ কোটি ১৩ লাখ। নারী ভোটর ছিল এর অর্ধেক। এ দফায় ১২ জন প্রার্থী তাদের ভাগ্য নির্ধারণে লড়াইয়ে অংশ নেন। মূল লড়াই চলে সিপিআই(এম) প্রার্থী তথা রাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী জিতেন্দ্র চৌধুরী এবং কংগ্রেসের সচিত্র দেববর্মার মধ্যে। সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তার। সীমান্তে নাশকতা ঠেকাতে বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার ৮৫৬ কিলোমিটার সীমানা বরাবর অতিরিক্ত বিএসএফ মোতায়েন করা হয়। ৭ এপ্রিল প্রথম দফার ভোটের দিন নির্বাচন হয় পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে। এখানে ১৯৫২ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ১৫ বারের মধ্যে ১১ বারই জিতেছে সিপিআই(এম)।

 

সিকিমের একটিমাত্র লোকসভা আসনের পাশাপাশি ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজ্যের ৩২টি আসনে বিধানসভা নির্বাচন। এখানে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৩১ জন ভোটারের মধ্যে নারী ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৫০ জন। সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট করতে তিন হাজার ৫০০ রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন ছিল ১৫ কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। এ আসনে কংগ্রেস, বিজেপির পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আম আদমি পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেস। এখানকার বর্তমান সাংসদ সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এসডিএফ)-এর প্রেমদাস রাই। অন্যদিকে এবার বিধানসভার ভোটে কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হতে পারে টানা ২০ বছর ধরে চলা এসডিএফ সরকারকে।

এদিকে ছত্রিশগড়ে মাওবাদীদের পৃথক হামলায় নিহত হয়েছেন ১১ জন। এদের মধ্যে সাতজন ভোট কর্মী। বাকিরা নিরাপত্তাকর্মী। ছত্রিশগড়ের বিজাপুর জেলার কেতুলনার অঞ্চলে গতকাল বেলা ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি আর কে ভিজ জানান, এদিন দুপুরে কয়েকজন ভোটকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মী বাসে করে যাওয়ার সময় কেতুলনারের গুদমা ও কুতরুর মাঝামাঝি একটি জায়গায় মাওবাদীদের রাখা একটি ভূমিমাইন বিস্ফোরণের মুখে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সাত ভোটকর্মীর। অন্য ঘটনায় মাওবাদীরা একটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা চালালে মৃত্যু হয় চার নিরাপত্তাকর্মীর। অ্যাম্বুলেন্সে পাঁচজন সিআরপিএফ কর্মী ছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে সুকুমার দর্বা গহদি এলাকায়। আইজি জি বি সিং জানান, জগদ্দলপুরেও একটি ভ্যান উড়িয়ে দিয়েছে মাওবাদীরা। ভোটের মৌসুমে এ নিয়ে বেশ কয়েকবার রক্তাক্ত হলো ছত্তিশগড়।

আগামী ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফার ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশসহ ১২ রাজ্যের ১৪০ আসনে।

 

সর্বশেষ খবর