রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা
শাহবাগ বিতর্ক

গণজাগরণ মঞ্চকে বনসাই করে রাখা যাবে না : ইমরান

গণজাগরণ মঞ্চকে বনসাই করে রাখা যাবে না : ইমরান

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, গণজাগরণ মঞ্চ কাঠামোবদ্ধ নয়। তাই একে 'বনসাই' করে রাখার চেষ্টা সফল হবে না। তিনি বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্র সংগঠনগুলোই আমার অব্যাহতি চাচ্ছে। ছাত্রলীগ নিজ স্বার্থের কথা ভেবেই বলছে যে গণজাগরণ মঞ্চের আর প্রয়োজন নেই। তবে শীঘ্রই কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করার পরিকল্পনা এ মুহূর্তে ডা. ইমরান ও তার গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের নেই বলে তিনি জানান। গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র এসব কথা বলেন। গতকাল জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও সংগঠক হিসেবে দাবি করে একটি পক্ষ ডা. ইমরান এইচ সরকারকে মুখপাত্রের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কামাল পাশা চৌধুরী নামের একজন এ ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ইমরান বলেন, যারা এ ঘোষণা দিয়েছেন তাদের পরিচয় আমি জানি না। নিজেদের তারা মঞ্চের কর্মী হিসেবে দাবি করছেন। আন্দোলন চলাকালে তারা এত লোকের মাঝে হয়তো থাকতেও পারেন। কিন্তু আমি কখনো মঞ্চের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের থাকতে দেখিনি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি গতকাল যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাদের মধ্যে পাঁচজনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক এবং তিনজন গত জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়নও তুলেছিলেন। বাকিরাও আওয়ামী লীগের কোন না কোন সংগঠনের নেতা-কর্মী। অর্র্থাৎ সেখানে উপস্থিতরা সকলেই ছিলেন একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। কিন্তু গণজাগরন মঞ্চ কোন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম নয়। আর কোন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গণজাগরন মঞ্চের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ারও নেই। সরকার দলীয় অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই গণজাগরন মঞ্চের আন্দোলন নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য একের পর এক সংবাদ সম্মেলন করছেন। গণজাগরন মঞ্চ বিভক্ত হয়ে পড়েছে এমন কথা রটিয়ে তারা দেশের সাধারন মানুষকে মঞ্চের ব্যাপারে বিভ্রান্ত করছেন। সাম্প্রতিক ঘটনার পর নতুন করে মঞ্চের গঠনতন্ত্রে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা তা জানতে চাইলে ডা. ইমরান বলেন, ছাত্র সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, সাংষ্কৃতিক সংগঠন ও ব্লগারদের জন্য আমাদের আলাদা ফোরাম রয়েছে। এছাড়া গণজাগরন মঞ্চের কর্মীদের রয়েছে নিবন্ধিত ফোরাম। এ সকল ফোরামের সদস্যদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে গণজাগরন মঞ্চের কর্মকৌশল গৃহীত হয়। তবে গত ১৪ মাসে এখনো গণজাগরন মঞ্চের ফোরামের সদস্যরা মঞ্চের সাংগঠনিক কাঠামো বা গঠনতন্ত্রের বিষয়ে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন নি। এমনকি এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন আলোচনাও গৃহীত হয়নি। মঞ্চের বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া জটিল। তাই সাম্প্রতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আমাদের সর্বশেষ সভায় আমরা দেশব্যাপী বিভিন্ন ফেরামের জন্য মঞ্চের প্রতিনিধিত্বকারী থাকতে হবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে গণজাগরন মঞ্চ কাঠামোবদ্ধ নয়। তাই একে 'বনসাই' করে রাখার চেষ্টা সফল হবে না। ছাত্রলীগ ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো তাকে 'অগণতান্ত্রিক' ও 'একনায়কতান্ত্রি' আচরন করার যে অভিযোগ করেছে সে প্রসঙ্গে ডা. ইমরান বলেন, সম্প্রতি জামায়াতের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে সরকারের অর্থ গ্রহনের বিরোধিতা করায় সরকারি আশ্রয়ে থাকা ৫টি ছাত্র সংগঠন মঞ্চের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মূলত সরকারের বিরোধিতা করার কারণেই তারা আমার বিরুদ্ধে গিয়েছে। তবে আমি কখনো কোন ইস্যুতে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেইনি। মঞ্চের সঙ্গে জড়িত সব ফোরামের নেতা-সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসুর সঙ্গে এক সময়ে ডা. ইমরানের ভাল সম্পর্ক থাকলেও ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি এখন ডা. ইমরানকে আক্রমন করে কথা বলছেন। এর কারন জানতে চাইলে ডা. ইমরান বলেন, ১৪ মাসে আমার সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত বিরোধ তৈরি হয়নি।

বাপ্পাদিত্য তার রাজনৈতিক অবস্থানের কারনেই আমার বিরুদ্ধে গিয়েছেন। গণজাগরন মঞ্চে মুখপাত্র হিসেবে ডা. ইমরানের অবস্থান মঞ্চের অন্যদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিনা এবং মুখপাত্রের সিদ্ধান্তেই মঞ্চ প্রভাবিত হয় কিনা তা জানতে চাইলে ডা. ইমরান বলেন, মুখপাত্রের নেতৃত্ব এখানে মূল বিষয় নয়। মঞ্চে মুখপাত্রের কাজ হচ্ছে সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত মানুষের সামনে তুলে ধরা।

ছাত্র সংগঠনের অব্যাহত চাপে মঞ্চের মুখপাত্র-এর পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়াবের কিনা তা জানতে চাইলে ডা. ইমরান বলেন, কোন রাজনৈতিক দলের কাছেই আমার দায়বদ্ধতা নেই। আমার দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র সাধারন মানুষের কাছে। বিশেষ করে একটি মহল যখন মঞ্চের ৬ দফা দাবিকে আক্রমন করে আমাদের সম্পর্কে সাধারন মানুষের কাছে বিভ্রান্তি তৈরি করতে ব্যস্ত সে অবস্থায় আমি কোনভাবেই নিজ দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবো না। বরং আরও দায়িত্বশীল হওয়ার চেষ্টা করব। ডা. ইমরান বলেন, মুখপাত্র হিসেবে আমি গণজাগরন মঞ্চের প্রতিনিধিত্ব করি। আর সে কারনেই এক সময় যখন প্রতিক্রিয়াশীলরা আমার উপর আক্রমন করেছিল তখন তারা গণজাগরন মঞ্চের প্রতিনিধিত্বকারীকেই আক্রমন করেছিল। ব্যক্তি ইমরানকে নয়। কারন মঞ্চকে সমন্বয় করার দায়িত্ব আমার কাঁধে। তবে ইমরানের অনুপস্থিতিতে মঞ্চের অন্যদের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনে সক্ষম এমন অনেক কর্মীই আমাদের আছে।

গণজাগরন মঞ্চের মুখপাত্র কোন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করছেন কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোন আলোচনা হয়নি। তবে জনমানুষের চাহিদার কথা ভেবে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কিনা তা ইমরান এখনই বলতে পারছেন না। ডা. ইমরানের বিরুদ্ধে ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ-বিভিন্ন সময় ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে দ্বন্দ তৈরি হলে তিনি সমঝোতার করতে চান না। এ প্রশ্নের উত্তরে ডা. ইমরান বলেন, যদি নৈতিক ও আদর্শিক ছাড় দিয়ে কারও সঙ্গে সামঝোতা করতে হয় তবে আমি সে সমঝোতাকে গুরুত্ব দেই না। একইভাবে মঞ্চের ৬ দফা দাবি ভুলণ্ঠিত করতে পারে এমন কোন মহলের সঙ্গেও সমঝোতা করতে আপত্তি আছে।

ডা. ইমরানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মঞ্চের নামে চাঁদা তোলার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক সময় আমি ছিলাম নাস্তিক, আজ আমি চাঁদাবাজ। আমরা মঞ্চের শুরু থেকেই কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলাম। তবে আমাদের সহকর্মীরা মঞ্চের কর্মকান্ডের জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট(মাইক ভাড়া, খাবার সংগ্রহ ইত্যাদি) প্রয়োজনীয় কাজে নিজ উৎসাহে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। গণজাগরন মঞ্চের আর প্রয়োজন নেই ছাত্রলীগের এমন মন্তব্যের সঙ্গে ডা. ইমরান একমত কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় স্থবিরতা দেখছি। সাঈদীর মামলার আপিল হয়েছে কিন্তু রায় হচ্ছে না। হেফাজত এখন বলছে তারা সরকারের বন্ধু। এত কিছুর পরও যদি ছাত্রলীগ বলে মঞ্চের প্রয়োজন নেই তবে ধরে নিতেই হবে তারা নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবেই এমনটি বলছে।

 

সর্বশেষ খবর