সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা
ঢাকা মহানগর বিএনপি

পাঁচ নেতার অগ্নিপরীক্ষা

পাঁচ নেতার  অগ্নিপরীক্ষা

এবার রাজধানী ঢাকার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নতুন ছক অাঁটছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আন্দোলনের উপযোগী সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে ঢাকার পাঁচজন নেতাকে দায়িত্ব দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে দুজন স্থায়ী কমিটির সদস্য, তৃতীয়জন দলের প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান, চতুর্থজন যুগ্ম-মহাসচিব এবং পঞ্চমজন দীর্ঘদিনের কারাবন্দী কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি কারামুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তার অনুসারীরাই কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। প্রথমজন সদ্য কারামুক্ত হলেও তৃতীয়জন আরও মাস দুয়েক আগে জেল থেকে বেরিয়েছেন। আর দ্বিতীয়জনকে সম্প্রতি এক বক্তব্যে উচ্চ আদালত থেকে তলব করা হয়েছে। তৃতীয়জন ৫ জানুয়ারির আগে-পরের আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিলেও নব্বইয়ের গণআন্দোলনে বিরাট ভূমিকা পালন করেন। চতুর্থজন দীর্ঘ আট বছর ধরে কারাবন্দী আছেন। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র এবং দলের নীতিনির্ধারক মির্জা আব্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে এটুকু বলতে পারি, আর সময় নষ্ট না করে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। না হলে বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের কাছ থেকে জনগণের দাবি আদায় কিছুতেই সম্ভব হবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আগামী আন্দোলনে এই পাঁচজন নেতা মুখ্য ভূমিকায় থাকলেও অন্য নেতাদেরও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে রাজধানীর আন্দোলনে সবাই মিলে সমন্বিত ভূমিকা পালন করবেন। দলীয় হাইকমান্ড থেকে শেষবারের মতো তাদের ওপর এ দায়িত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, এবার আর কোনোক্রমেই ব্যর্থ হওয়া চলবে না। আর এ জন্য যা কিছু করার দরকার তার সব কিছুই করতে হবে। সেভাবেই প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে সরকারের মধ্যে গণতন্ত্র নেই সে সরকারকে বিদায় না করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় না। তাই আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আর এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হলে 'হাই অ্যান্টিবায়োটিক' দিতে হবে। ঢিমেতালে আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করা সম্ভব নয়। জানা গেছে, ঢাকায় আন্দোলন না জমাতে পারলে সারা দেশে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেললেও যে তেমন কোনো ফায়দা নেই এ কথা মাথায় রেখে দল গোছানোর পাশাপাশি আন্দোলনের নতুন ছক তৈরি করছে দলটি। এর মধ্যে ঢাকাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে নেওয়া হচ্ছে প্রস্তুতি। গত ৫ জানুয়ারির পূর্বাপর আন্দোলনের ব্যর্থতার মূল্যায়ন শেষে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। রাজধানীতে আন্দোলনমুখী সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির মাধ্যমে কঠোর প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য চারজন পরীক্ষিত নেতাকে অঘোষিতভাবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। বেগম খালেদা জিয়া পরিষ্কার ভাষায় তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, এটিই হবে তাদের রাজনৈতিক জীবনের শেষ পরীক্ষা। রাজধানীর প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেন, নির্বাচনমুখী নয়, কঠোর আন্দোলনমুখী করে দল পুনর্গঠন করতে হবে। এ ব্যাপারে দলীয় চেয়ারপারসন যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেভাবেই কাজ করতে হবে। নিজেদের ভেতরে আর কোনো ভেদাভেদ না রেখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করতে হবে। কারণ আর সময় নেই, শুধু রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীই নন, সাধারণ জনগণসহ সর্বস্তরের মানুষেরই এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির রাজনীতিতে আর কোনো বিভাজন দেখতে চান না। তিনি একটি সমন্বিত আন্দোলন দেখতে চান। সে কথাটিই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতাদের। এমনকি সেই আন্দোলনের সব ব্যয় নির্বাহের জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির একজন নেতা আক্ষেপ করে বলেন, 'সেই তো একে একে সবাই জেল খাটলি, তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে পালিয়ে লাভ হলো কী!' তার এ বক্তব্য সাম্প্রতিক আন্দোলনে আত্মগোপনকারী নেতাদের উদ্দেশ্যে। তবে সংশ্লিষ্ট নেতাদের মধ্যেও এ ব্যাপারে আত্মোউপলব্ধি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

সর্বশেষ খবর