রবিবার, ২২ জুন, ২০১৪ ০০:০০ টা

রাজধানীর ৩৫১ ছিনতাই স্পট

রাজধানীর ৩৫১ ছিনতাই স্পট

রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সশস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে কেউ সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন, কেউ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, আবার কেউ রাজপথে লাশ হচ্ছেন। এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে চললেও এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়ে না। গ্রেফতার হয় না ছিনতাইকারী, উদ্ধার হয় না ছিনতাইকৃত টাকা ও মালামাল। গত এক মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের কবলে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। ছিনতাইকারীদের গুলি ও ছুরির আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। এসব ঘটনায় কোটি টাকার ওপরে ছিনতাই হয়ে যায়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিকাশকর্মীকে গুলি করে ছিনতাইয়ের ঘটনাও রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, রাজধানীর ৩৫১ পয়েন্টে শতাধিক ছিনতাইকারী চক্র এখন সক্রিয়। এসব পয়েন্টেই ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, খুন, গুম ও অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে সাত হত্যাকাণ্ড ও ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যাকাণ্ডেও ডিএমপিকে কাজ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার অপরাধ কর্মকাণ্ড তো রয়েছেই। ফলে মামলার তদন্ত, অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল, চেকপোস্ট, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান সবই যেন থমকে গেছে। আর এ সুযোগে চিহ্নিত অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আর এ জন্যই রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ছে চুরি, ছিনতাইসহ চাঁদাবাজির ঘটনা। এরপরেও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হচ্ছে। ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, রাজধানীতে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ঠিকই। তবে ছিনতাইকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করছে পুলিশ। ইতিমধ্যে এসব চক্রের অনেক সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। নগরবাসীর সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা তৎপর রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা দিনে দিনে তাদের কৌশল বদল করে নতুন কৌশল নিয়েছে। ছিনতাইকারীদের একটি অংশ এখন ছিনতাইকালে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে, পুলিশ পরিচয়ে দেহ তল্লাশির নামে যাত্রীদের নামায় রিকশা বা গাড়ি থেকে। তারপরই দেখা যায় তাদের আসল রূপ। এমন কিছু চক্রকে আটক করেছেন থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর যেসব স্পটে হরহামেশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে তার মধ্যে মালিবাগের এসবি অফিসের সামনে থেকে কাকরাইল মোড়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ১ নম্বর গেট থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের আগে পীরজঙ্গি মাজার, শান্তিনগর মোড় থেকে ইস্টার্ন প্লাজা মার্কেট, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর থেকে টেকনিক্যাল মোড়, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গুলশান শুটিং ক্লাব, মহাখালী কাঁচাবাজার, পান্থপথ মোড় থেকে ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে কাজলার পাড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে জনপথ মোড় হয়ে ধলপুর সিটি, মেরুল বাড্ডা থেকে রামপুরা ব্রিজ, মৌচাক থেকে মগবাজার মোড়, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া, বাবুবাজার ও হাতিরঝিল প্রকল্পের মতো স্পটে দিন-দুপুরে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এ ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকার গলিতেও ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা অধিকাংশ তরুণ। এদের মধ্যে রয়েছে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। নেশার টাকা জোগাড় করতে এসব তরুণ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

 

ছিনতাইয়ের কয়েকটি ঘটনা : সাম্প্রতিক ছিনতাইয়ের কয়েকটি ঘটনার মধ্যে রয়েছে বৃহস্পতিবার হাজারীবাগের ১ নম্বর বাদলপুর লেনে তানিম ও জনি নামে দুই বিকাশকর্মীকে কুপিয়ে তাদের কাছে থাকা ৩৩ লাখ টাকা ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। তারা নবাবপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন একটি বেসরকারি ব্যাংকে সারা দিনের কালেকশনকৃত টাকা জমা দিতে যাচ্ছিলেন। একইদিন রামপুরার উলন রোডে ইরান মুন্সি নামে অপর এক বিকাশকর্মীকে বাম পায়ে গুলি করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত ১৭ জুন মুগদা বাসস্ট্যান্ডের সামনে রুবেল নামে এক ট্রাভেল এজেন্সি কর্মকর্তাকে গুলি কলে ৬ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। গত ১৬ জুন ধোলাইরপাড় সাবান ফ্যাক্টরি গলির জাকির হোসেন নামে এক দোকানদারকে গুলি করে ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।

গত ৫ জুন রামপুরা টেলিভিশন সেন্টারের পেছনে রমজান আলী (৩৮) নামে বিকাশের সেলস অফিসারকে গুলি করে ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত ২ জুন মিরপুরে আমজাদ হোসেন (৩৫) ইট-বালুর ব্যবসায়ী অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে ৫ লাখ টাকা হারিয়েছেন। গত ২১ মে শেরেবাংলা নগরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ ও মাটির দৃঢ়তা পরীক্ষার যন্ত্র ছিনিয়ে নেয়। মাটির দৃঢ়তা পরীক্ষার যন্ত্রের মূল্য আনুমানিক ৭ লাখ টাকা। একইদিন কচুক্ষেতে শহিদ মিয়া নামে এক কাঁচামাল ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ১৮ হাজার টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গত ২০ মে দক্ষিণ বনশ্রীর মেরাদিয়ায় মোহাম্মদ সানাউল্লাহ (২৮) নামে বিকাশকর্মীকে কুপিয়ে ৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গত ১৯ মে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে জহির উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে ৭ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলি তার বুকে ও পায়ে বিদ্ধ হয়। গত ২০ মে সন্ধ্যায় তিনি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একইভাবে মালিবাগে মাছ ব্যবসায়ী নান্নু মিয়াকে কুপিয়ে দশ হাজার টাকা ও মালামাল নিয়ে যায়। গত ১৪ মে বারিধারার ডিওএইচএস এলাকায় 'মাস্টার মাইন্ড' ও 'মাস্ট হেড পিআর' নামক একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার অফিসের গ্রিল কেটে নগদ ১১ লাখ টাকাসহ কম্পিউটার ও অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস চুরি, গত ১০ মে শাহবাগে আবরার ইকবাল (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে তার মোটরসাইকেল এবং একইদিনে রাজারবাগ পুলিশ লাইন টেলিকম ভবনের সামনে এক ব্যক্তির মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর