শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
বন্ড সুবিধার ডুপ্লেক্সবোর্ড খোলাবাজারে

এনবিআরের সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড

বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রির অপরাধে নারায়ণগঞ্জের রায়হান প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে ১০৫ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এটি এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অর্থদণ্ড বলে জানিয়েছে এনবিআর। বিভিন্ন বন্ডেড ওয়্যার হাউসের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে এনবিআরের অভিযানে গত মঙ্গলবার এ অনিয়ম ধরা পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক গাঢাকা দিয়েছেন।
এনবিআর সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের রায়হান প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার কাগজ এবং ডুপ্লেক্স বোর্ড এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে। এনবিআর এতে রাজস্ব বঞ্চিত হয় ১৩ কোটি টাকা। এনবিআরের তদন্তে এ জালিয়াতি ধরা পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির লিয়েন ব্যাংক শান্তিনগর যমুনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ অনিয়মে বড় অঙ্কের পাওনা চেয়ে অর্থঋণ আদালতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
রায়হান প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারে গত মঙ্গলবার দেওয়া অর্থদণ্ড ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অর্থদণ্ড- এমন তথ্য জানিয়ে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশীয় কাগজ শিল্পে স্থানীয় উৎপাদনকারীরা যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে মিথ্যা ঘোষণায় কাগজ ও ডুপ্লেক্স বোর্ড এনে প্রকৃত কাগজ ব্যবসায়ীদের অসম প্রতিযোগিতায় ফেলা হচ্ছে। এ বিষয়ে এনবিআর কঠোর অবস্থানে আছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন বন্ডেড ওয়্যার হাউসের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি হিসাব কষে বলেন, ২০১২ সালে বন্ডেড ওয়্যার হাউসের অনিয়ম তদন্ত করে ৪৪ কোটি টাকার ফাঁকি পাওয়া যায়। রাজস্ব কর্মকর্তাদের নজরদারি বাড়ানোয় ২০১৩ সালে ২৭১ কোটি টাকা এবং ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ২৪০ কোটি টাকার অনিয়ম ধরা সম্ভব হয়েছে।
জানা গেছে, বন্ডেড সুবিধার অপব্যবহার করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অনেকে এ সুবিধা পেতে লাইসেন্স জাল করছে। আবার মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য এনেও খোলাবাজারে বিক্রি করছে অনেকে। এসব কারণে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি বন্ডেড ওয়্যার হাউসের অনিয়ম তদন্তে এনবিআর কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের মূল দফতর থেকে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বন্ডেড ওয়্যার হাউসের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়মগুলো ধরছে।
অভিযানের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার জাল বন্ড লাইসেন্সে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকিতে কাগজ ও ডুপ্লেক্স বোর্ড কালোবাজারে বিক্রি করায় ঢাকার বাবুবাজারের এসএম পলি কার্টন অ্যান্ড প্যাকেজিংকে ১৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাসহ মোট ১৭ কোটি টাকা এনবিআরের তহবিলে জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের মাসুদ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের বিরুদ্ধে একইভাবে আদমজী ইপিজেড থেকে ৮০৯ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড এনে খোলাবাজারে বিক্রির ঘটনা তদন্তে ধরা পড়ে। এতে গতকাল (বুধবার) ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনার প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে। অর্থদণ্ড ও শুল্ক ফাঁকিসহ প্রতিষ্ঠানটিকে ২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। এসব অর্থ ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, গত তিন মাসে শতাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০টিরও বেশি কারখানায় গিয়ে ঠিকানা অনুযায়ী  কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বন্ডেড ওয়্যার হাউসের তালিকা দেখে সম্প্রতি ওয়ান প্যাক প্যাকেজিং নামের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেখানে এ নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া যায়নি। কাগজে-কলমে এ প্রতিষ্ঠান ১৪২ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানির অনুমতি পায়। এ পরিমাণ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করায় ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

সর্বশেষ খবর