শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

কৃষি জমির ওপর চাপ কমাতে ৬৪ জেলায় গুচ্ছগ্রাম

মেয়াদ বাড়ানো হবে চলমান প্রকল্পের

দেশের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কৃষি জমিকে বসতবাড়ির চাপমুক্ত রাখতে চায় সরকার। পাশাপাশি যারা ভূমিহীন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের বসবাসের জন্য স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দিতে ‘আদর্শ গ্রাম’ নামে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এজন্য ১৮৭ কোটি টাকায় দেশের ৬৪ জেলায়ই গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য এ প্রকল্পের কাজ অবশ্য ২০০৯ সালেই শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্পের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের কথা মাথায় রেখে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ব্যাপ্তিও বাড়ানো হচ্ছে সারা দেশে। ৬৪ জেলায়ই বসবাসকারী ভূমিহীন দরিদ্র এবং স্বল্প পরিমাণ জমির মালিক- এ ধরনের পরিবারকে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। যাদের সামান্য জমি আছে আর তাতে বসতবাড়ি করে বসবাস করছে তাদের গুচ্ছগ্রামে এনে নিজের মালিকানাধীন আবাদি জমিতে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করবে ভূমি মন্ত্রণালয়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ভূমি মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার ১০ হাজার ৬৫০টি ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাহীন ও নদী ভাঙা পরিবারকে প্রাথমিকভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় ২০০৯ সালে। প্রতি পরিবারকে সর্বনিু ০.০৪ একর বসতভিটার জমির নামজারি ও কবুলিয়ত প্রদান করা হবে। আর জাপান সরকারের ঋণের সুদ মওকুফের তহবিল বা জেডিসিএফের ১৮৭ কোটি ২৯ লাখ ৮ হাজার টাকা অর্থায়নে ভূমি মন্ত্রণালয় দেশের তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া বাকি সব জেলায় ক্লাইমেট ভিকটিমস রিহ্যাবিলিটেশন প্রকল্প নামে একই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং বিধবাদের ক্ষেত্রে বসতভিটাসহ একক নামে ও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে কবুলিয়ত দলিল প্রদান করা হবে। প্রতি বছর বন্যা, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ নভেম্বর নোয়াখালীর রামগতি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তারই আলোকে বৃহত্তর নোয়াখালীর চারটি গুচ্ছগ্রামে ১ হাজার ৪৭০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়।
 ১৯৮৮ সালে এ প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে আদর্শ গ্রাম ভূমিহীনদের পুনর্বাসন কাজ অব্যাহত থাকে। ২০০৭ সালের নভেম্বরে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচণ্ড আঘাত আনে। এতে ৩৬ জেলার লক্ষাধিক মানুষের জানমাল ও বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো গৃহহীন মানুষকে গৃহসংস্থান ও কর্মসংস্থান করে মূল উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা। প্রকল্পের আওতায় দুই প্রকারের ঘর নির্মাণ করা হবে। প্রথমত আরসিসি পিলার দিয়ে দুই কক্ষবিশিষ্ট ৩০০ বর্গফুট মেঝের ঘর ও পাঁচ রিংবিশিষ্ট স্যানিটারি ল্যাট্রিন। মূলত দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা এবং যেখানে বন্দোবস্তযোগ্য সরকারি খাস জমি পাওয়া যাবে সেখানেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন দেশের দারিদ্র্য হ্রাস পাবে, অন্যদিকে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ খবর