বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

কানাডায় নালিশ সন্ত্রাসী চঞ্চলের!

কানাডায় নালিশ সন্ত্রাসী চঞ্চলের!

রাজধানীর একটি আসনের এমপি এবং র‌্যাবের বিরুদ্ধে কানাডায় অভিযোগ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র পলাতক সন্ত্রাসী ও যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলার আসামি সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল। ভাই শরাফত হোসেন কনকের রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে সহায়ক হিসেবে কানাডার নাগরিকত্ব এবং অভিবাসন দফতরে গত ২০ জুলাই লেখা একটি চিঠিতে এসব অভিযোগ করেন চঞ্চল। সম্প্রতি ওই চিঠির একটি কপি এসেছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করা চঞ্চল তার ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ক্ষমতাসীন দলের গুলশান-বাড্ডা এলাকার সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতউল্লাহ এবং র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার কারণে তার এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন হুমকির মুখে। মিল্কী হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ আসার পরই আত্মগোপনে চলে যান চঞ্চল। এর কিছুদিন পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একটি অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায়। সেখানে তিনি বক্তব্যও রাখেন। গত মার্চে তিনি নিউইয়র্ক থেকে এ চিঠি লেখেন। নিউইয়র্কের নোটারি পাবলিক মোহাম্মদ নূরউদ্দীনের কাছে হলফকৃত সাখাওয়াতের চিঠির একটি কপি এসেছে। ওই চিঠিতে চঞ্চল উল্লেখ করেছেন, গত সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর এ কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতউল্লাহ তার ওপর ক্ষুব্ধ হন। তার বাড়িতেও রহমতউল্লাহর ক্যাডাররা হামলা চালায়। এরপর তিনি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হুমকি ও হামলার শিকার হন। তার স্ত্রী ও দুই শিশুপুত্রকে বন্দুক ঠেকিয়ে হুমকি দেয় র‌্যাব। র‌্যাবের কর্নেল জিয়াউল আহসান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল কিসমত হায়াৎ ও মেজর মোসতাকের নির্দেশে এ ঘটনা ঘটানো হয়। বাড্ডার যুবলীগ নেতা কাওসার মাহমুদ তাকে (চঞ্চলকে) ও তার কয়েকজন আত্মীয়কে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করা হয়। তবে এমপি রহমতউল্লাহ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চঞ্চলের মতো খারাপ লোকের সঙ্গে আমার বিরোধ তৈরি হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। নীতিগতভাবে সে অত্যন্ত খারাপ, ধান্দাবাজ, রংবাজ প্রকৃতির। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। হেন কোনো কাজ নেই, যা সে করত না। রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার জন্য কারও না কারও ওপর দোষ চাপাতে হবে, সে কারণে এসব লিখছে বলে উল্লেখ করেন। চিঠিতে চঞ্চল আরও উল্লেখ করেন, আমার বিরুদ্ধে মারাÍক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমার স্ত্রীর বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমানকে হত্যা করে কাওসার মাহমুদের ক্যাডাররা। এ রকম সাংঘাতিক হুমকির মুখে আমি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে বাধ্য হই। যেহেতু আমার ভাই শরাফত হোসেন আমার পাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তাই তিনি (শরাফত) ও তার স্ত্রীও ওইসব ক্ষমতাধরদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। তারা যদি বাংলাদেশে অবস্থান করেন তবে হত্যার শিকার হতে পারেন। এ পরিস্থিতিতে আমি তাদের বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় খোঁজার পরামর্শ দিয়েছি। এসব পরিস্থিতির কারণে আমার এক বোন ও তার স্বামী এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আমার এক বোনের স্বামীকে গত আগস্টে র‌্যাব গ্রেফতার করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‘দেশের অনেক সন্ত্রাসী বিদেশে গিয়ে অনেক সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়। ঠিক এ ধরনেরই একটি কাজ করেছে মিল্কী হত্যার পলাতক আসামি চঞ্চল। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। তবে আমার কথা হলো রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের অভিবাসন দফতরের উচিত হবে ওইসব অফিসারদের কাছ থেকে এর জবাব নেওয়া। নইলে এ ধরনের দাগি আসামি যে দেশে আশ্রয় পাবে সেখানেও তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়াতে পারে। এতে করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ জুলাই মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় ওই হত্যাকাণ্ড দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। হত্যাকাণ্ডের পর দিন মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চঞ্চলসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে গুলশান থানায় হত্যা মামলা হয়। মামলার প্রধান সন্দেহভাজন আরেক যুবলীগ নেতা জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ৩১ জুলাই র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর ‘ক্রসফায়ারে’ তিনি ও আরেকজন নিহত হন। দীর্ঘ তদন্তের পর চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল চঞ্চলসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন র‌্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার কাজীমুর রশীদ। ওই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে মিল্কীর স্বজনরা গত ৯ জুন আদালতে নারাজি দেন। এরপর ১৭ জুন আদালত মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ৭ জুলাই সিআইডি তদন্ত শুরু করে। এখনো সিআইডির তদন্ত চলছে।

সর্বশেষ খবর