শিরোনাম
শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
চার বছরে লোকসান দুই কোটি টাকা

ডুবতে বসেছে ওয়াটার বাস সার্ভিস

ডুবতে বসেছে ওয়াটার বাস সার্ভিস
যাত্রী সংকট ও অব্যবস্থাপনায় ডুবতে বসেছে ওয়াটার বাস সার্ভিস। অদক্ষতার কারণে উদ্বোধনের পর চার বছরে এই সার্ভিসের জন্য লোকসান গুনতে হয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) উদ্যোগে ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০১০ সালের ২৮ আগস্ট এ সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সংস্থাটি এম এল বুড়িগঙ্গা ও এম এল তুরাগ নামের দুটি বাস দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। কিছুদিন পর আরও দুটি নতুন ওয়াটার বাস নামানো হলেও যাত্রী সেবায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এ ছাড়া চারটি ওয়াটার বাসের মধ্যে দুটি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ডে মেরামতের অপেক্ষায় রয়েছে। অন্য দুটি যাত্রী সংকটে বেশিরভাগ সময় ঘাটে অলস সময় পার করে। বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, শুরু থেকেই নানা ধরনের যান্ত্রিক ও কারিগরি ত্র“টির কারণে নির্ধারিত সময়ে যাত্রা করতে পারেনি ওয়াটার বাস সার্ভিস। পাশাপাশি নিুমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে ওয়াটার বাস নির্মাণ করায় প্রথম থেকেই যাত্রাকালীন সময়ে নানা ধরনের অসুবিধা দেখা দিত। এ ছাড়া জোড়াতালি দিয়ে এখনো প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ট্রিপের বেশি সার্ভিস দেওয়া যাচ্ছে না। অথচ সার্ভিসটির উদ্বোধনকালে দৈনিক ছয় থেকে সাতটি ট্রিপে যাত্রী পারাপার করা যেত। এখন যন্ত্রাংশের ত্র“টির কারণে এক ঘণ্টার যাত্রা পথে দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ফলে দিন দিন বাড়ছে জনদুর্ভোগ। সংকটাবর্তে পড়ছে এ সার্ভিসটি। দুর্ভোগের কারণে অনেকে ওয়াটার বাসে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন। পাশাপশি তুরাগ নদীর বিভিন্ন স্থানে ১০-১১টি বিপজ্জনক বাঁক থাকায় দ্রুত গতিতে ওয়াটার বাস চলতে পারে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন ধরনের এ সার্ভিসটি ঝুঁকির মুখে পড়ল। সার্ভিসটি এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। যে কোনো সময় হয়তো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সদরঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, কোনো নির্ধারিত জেটি বা ঘাট না থাকায় সাধারণ নৌকার মতো বাসটিকে ভাঙাচুরা ঘাটে ঝুঁকি নিয়ে ভেড়াতে হয়। বাস থেকে নামার সিঁড়ি এতটাই উঁচু যে বয়স্ক লোকজনের সমস্যা হয়। এই নৌপথের তিনটি ঘাট থাকলেও কোনো যাত্রী ছাউনি নেই। গাবতলীর ল্যান্ডিং স্টেশনে কথা হয় সাভার উপজেলার বেগুনবাড়ী এলাকার বাসিন্দা লোকমান হাকিমের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি ওয়াটার বাসের নিয়মিত যাত্রী ছিলাম। নির্ধারিত সময়ে ও নিয়মিতভাবে চলাচল না করায় জনপ্রিয় ও নিরাপদ বাহন আজ বন্ধের পথে। ফলে আমার মতো অনেক যাত্রীর আগ্রহ কমে গেছে। মিরপুর মাজার রোডের বাসিন্দা আবদুল আলী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু হলে আমরা কম সময়ে ব্যবসার কাজে সদর ঘাটে যেতে পারতাম। এখন পারছি না। এ ছাড়া তুরাগ নদীতে ড্রেজিং না করায় পলি জমে নদী ভরাট হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে চলাচলে বিঘœ ঘটে। এসব কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ওয়াটার বাস সার্ভিস। ওয়াইজ ঘাটের ব্যবসায়ী ছলিম উদ্দিন জানান, ওয়াটার বাস সার্ভিসকে ভাওতাবাজি আখ্যা দিয়ে বলেন, কখন আসে, কখন ছাড়ে কেউ বলতে পারে না। বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, তাড়াহুড়া করে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা ওয়াটার বাস দুটি চালুর ১-২ দিন পরপরই বন্ধ হতে শুরু করে। ফলে ওই দুটি বাসের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিসি। গতকাল সরেজমিনে গাবতলী ও সদরঘাট ল্যান্ডিং স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, গাবতলী থেকে সদরঘাট পর্যন্ত দুটি ওয়াটার বাস চলাচল করছে। বাস দুটিতে মরিচা ধরে গেছে। ভিতরের অবস্থা করুণ। ওয়াটার বাস চালক কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আগের গতিতে বাসটি চলে না। চলার পথে মাঝে মধ্যে যান্ত্রিক ত্র“টি দেখা দেয়। এ কারণে প্রতিদিন যাত্রীদের গালাগাল শুনতে হয়। বাসটি মেরামত না হলে যে কোনো দিন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আরেক কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, অনেকটা ঢিমেতালে চলছে ওয়াটার বাস সার্ভিস। যা বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোনো সময়। প্রতিদিন এই বাস পরিচালনায় গড়ে ২২ হাজার টাকা ব্যয় হলেও আয় হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। ওয়াটার বাস সার্ভিসের ক্ষেত্রে অব্যবস্থপনা নেই জানিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ওয়াটার বাস সার্ভিস যানজট নিরসনে সাধারণ মানুষের কল্যাণে চালু করেছিল বর্তমান সরকার। ভালো ফলও পাওয়া গেছে। আশা করছি আগামীতে যাত্রী সংকট কেটে যাবে। তখন লোকসান হবে না। বরং লাভের মুখ দেখবে সংস্থা।

সর্বশেষ খবর