শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

হিংস্র ধলাপেট সিন্ধুঈগল

হিংস্র ধলাপেট সিন্ধুঈগল
প্রথম দর্শন ঘটে ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে। সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদীর ওপর ঘুরপাক খেতে দেখেছি। আকারে বৃহৎ বিধায় প্রজাতি শনাক্তকরণে সমস্যা হয়নি। স্বভাবসুলভ আচরণের কারণে বাইনোকুলারের আইপিচে দৃষ্টি আটকে গেছে তাৎক্ষণিকভাবে। লক্ষ্য করেছি উড়ন্ত পাখিটার শুভ্রবক্ষ সূর্যালোকের সঙ্গে মিশে চমৎকার এক বাহারি রঙের দ্যুতি সৃষ্টি করেছে। দারুণ সেই অনুভূতিটা বোঝানোর নয়। মূলত সামুদ্রিক পাখি হিসেবেই এদের পরিচিতি। আমাদের দেশে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জলাশয় নদ-নদীর মোহনায় কিংবা প্যারাবনে এদের সাক্ষাৎ মেলে। দেশের বিচরণরত ঈগল প্রজাতির পাখিদের মধ্যে আকারে সর্ববহৎ। খানিকটা হিংস্রও। অন্যসব শিকারী পাখিদের মতো খাবার চিনিয়ে নিতে ইতস্ততবোধ করে না। শিকারের লোভে জলের ২০-৩০ মিটার ওপরে ধীরগতিতে বৃত্তাকারে উড়ে বেড়ায়। শিকার নজরে পড়লে ঝাঁপিয়ে পড়ে পায়ের তীক্ষè নখে বিঁধিয়ে নিয়ে উড়ন্ত অবস্থায় খেয়ে পেলে। এ ছাড়াও গাছের ডালে অথবা মাটিতে নেমে খাবার খেতে দেখা যায়। এ পাখিরা অনায়াসে সমুদ্র-সমতল থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। উড়তে উড়তে পুরুষ পাখি উচ্চস্বরে নাকিসুরে ডাকে, ‘কা...কা...কা...’। অপরদিকে স্ত্রী পাখি প্রজননকালে নাকিসুরে ডাকে, ‘কাঙ্ক...কাঙ্ক...কাঙ্ক’। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, ব্র“নাই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, পূর্ব তিমুর, পাপুয়া নিউগিনি, হংকং, চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় এলাকা পর্যন্ত। আইইউসিএন এ প্রজাতিটিকে নূন্যতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত।
পাখির বাংলা নাম : ‘ধলাপেট সিন্ধুঈগল’ ইংরেজি নাম : ‘হোয়াইট বেলিড সি ঈগল’। ‘শুভ্রবক্ষ সিন্ধু ঈগল’ নামেও এরা পরিচিত। প্রজাতিটি লম্বায় লেজ থেকে ঠোঁটের ডগা পর্যন্ত ৯০-৯২ সেন্টিমিটার। প্রশ্বস্থ ডানার পরিধি ৫৫-৫৭ সেন্টিমিটার। মাথা, গলা, ঘাড়, বুক ও পেট সাদা। বস্তিপ্রদেশ ধূসর। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ কালচে-ধূসর। ডানার ঢাকনি সাদা। ঠোঁট শক্ত মজবুত, অগ্রভাগ বঁড়শির মতো বাঁকানো। পা ও পায়ের পাতা ধূসরাভ সাদা। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম হলেও আকারে সামান্য বড় স্ত্রী পাখি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির রং ভিন্ন। মাথা ও ঘাড় লালচে-বাদামি। পিঠ বাদামি। বুক লালচে-পীতাভ বর্ণের। প্রধান খাবার মাছ, সাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, ইঁদুর ইত্যাদি। প্রজনন সময় অক্টোবর থেকে জানুয়ারি। তবে স্থানভেদে প্রজনন ঋতুর হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে বড় গাছের উচ্চ শিখরে। ডালপালা দিয়ে বড়সড়ো অগোছালো বাসা বানায়। এক বাসায়  অনেক বছর যাবৎ ডিম বাচ্চা তোলে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটে ৪০-৪২ দিনে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর