রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
পজেটিভ বাংলাদেশ

বন বেগুনের সঙ্গে টমেটোর গ্রাফটিং

বর্ষা মৌসুমে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় কয়েকটি গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবার বন বেগুন গাছের সঙ্গে টমেটোর গ্রাফটিং চারা উৎপাদন, বিক্রি ও চাষাবাদ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। এ পদ্ধতি কমলগঞ্জ এলাকার কৃষক ব্রজেন্দ্র সিংহ কৃষিকথার একটি প্রবন্ধ অবলম্বন করে ১৯৯০ সাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেন। তাকে অনুসরণ করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। ফলে অমৌসুমেও টমেটো উৎপাদনে ভূমিকা রেখে চলেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিরা কমলগঞ্জের উৎপাদিত এসব গ্রাফটিং চারা সংগ্রহ করে চাষাবাদ করছেন এবং উচ্চ মূল্যে বাজারজাত করছেন। ধান খেতের মধ্যে অতিরিক্ত ফসল হিসেবেও উৎপাদন করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ও আদমপুর ইউনিয়নের তিলকপুর, জামিরকোনা ও ঘোড়ামারা গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার বন বেগুনের সঙ্গে টমেটোর চারার গ্রাফটিং কার্যক্রম ও চাষাবাদ করছেন। টমেটো চারার গ্রাফটিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ লাউ গাছের চারার সঙ্গে তরমুজের গ্রাফটিং করে খেতে লাগাচ্ছেন। শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদকৃত টমেটো ভরা বর্ষা মৌসুমেও চাষাবাদে খড়কুটা পুড়িয়ে চারা উৎপাদনের পর খেতে লাগানো হয়। কৃষক ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ জানান, কৃষিকথা বই থেকে টমেটোর গ্রাফটিং পদ্ধতি জেনে ১৯৯০ সাল থেকে এই পদ্ধতি শুরু করি। ৬০ দিনের বন বেগুন গাছের চারা সংগ্রহ করে টমেটো বারী-৪ বিজ ৩০ দিনের চারার সঙে গ্রাফটিং করে ৭ থেকে ১০ দিন রেখে খেতে লাগানো হয়। উপরে ও নিচে কালো পলিথিন দিয়ে শেড তৈরি করে প্রথমে চারা উৎপাদন এবং যেখানে চাষাবাদ হয় সেখানেও পলিথিনের শেড তৈরি করে টমেটো চাষাবাদ করতে হয়। ফলে এই সময়ে গোবর, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। দিনে মাথাপিছু চার থেকে সাড়ে চারশ চারার গ্রাফটিং করা সম্ভব। গ্রাফটিং পর্যন্ত দুটি চারার খরচ আসে ৪ থেকে ৫ টাকা। এরপর ১০ থেকে ১৫ টাকা হারে প্রতি চারা বিক্রি করা সম্ভব। ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ প্রথমে তরমুজের চাষাবাদ ও গ্রাফটিং করতেন। পরবর্তীতে টমেটোর গ্রাফটিং করে লাভবান হয়েছেন। এক মাসে তিন হাজার চারার মূল্য বাবদ ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন। আরও প্রায় ১০ হাজার চারা রয়েছে বিক্রি ও খেতে লাগানোর জন্য। শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে টমেটোর গ্রাফটিং চারা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব বলে তিনি জানান। বছরে তিন বার একই জায়গায় চাষাবাদ করা যায়।
মানিক মিয়া, মুমিন খান, আয়ুব আলীসহ প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার টমেটোর গ্রাফটিং চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। চৈত্র মাস পর্যন্ত টমেটো ফলবে এবং বিক্রি করলে প্রতি কেজি ১০০ টাকা করে দাম পাওয়া যায়। মানিক মিয়া বলেন, ২০ শতক জমিতে টমেটো ফলাতে খরচ পড়বে ৫০-৬০ হাজার টাকা এবং বিক্রি করে পাওয়া যাবে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। কমলগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুন নবী জানান, কমলগঞ্জে টমেটোর চারার গ্রাফটিং বাংলাদেশে প্রথম। এখান থেকে বিভিন্ন স্থানের লোকজন চারা সংগ্রহ করে চাষাবাদ করছেন। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে টমেটোর উৎপাদন কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে আনবে। চাষাবাদকারীরা কৃষি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কথা বললেও তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের সাহায্য করে থাকেন।
দেশের অন্যান্য স্থানেও এই পদ্ধতি অবলম্বন করে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। এমনকি উন্নত টমেটো উৎপাদন করে সবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আয় করতে পারেন লাখ লাখ টাকা।

সর্বশেষ খবর