ঢাকার একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত আহসান জুয়েল (ছদ্মনাম)। দুই বছর আগে রুমী আক্তারকে (ছদ্মনাম) বিয়ে করেন। রুমী উচ্চশিক্ষিতা হলেও স্বামীর ইচ্ছায় চাকরি বা অন্য কোনো কাজ করছেন না। স্বামী সকালে অফিসে চলে যান। ফলে দীর্ঘ সময় বাসায় একা থাকতে হয় রুমীকে। ফলে ঘরে বসে টিভি বা ইন্টারনেটে বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করে সময় কাটাতে হয় তাকে। শুরুতে তেমন একটা আগ্রহ না থাকলেও একাকিত্ব কাটাতে ক্রমেই রুমী ফেসবুকের বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটে আসক্ত হয়ে পড়েন। দীর্ঘ আলাপচারিতায় ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় থাকা এক পরিচিতের সঙ্গে একসময় পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে রুমীর। এমনকি রাতে স্বামী বাড়ি ফিরলেও রুমীকে মোবাইলে ফেসবুক হাতে ব্যস্ত দেখা যায়। শুরুতে জুয়েল খুব একটা কিছু না বললেও একসময় তার সন্দেহ বাড়তে থাকে। জুয়েলের সন্দেহ একসময় সত্য হয় যখন তিনি রুমীর অনুপস্থিতিতে তার ফেসবুকে আসা রুমীর ছেলেবন্ধুর পাঠানো বার্তা পড়েন। জুয়েল নিশ্চিত হন তার স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত। এ নিয়ে জুয়েল-রুমীর মনোমালিন্য হয়। তা একপর্যায়ে হাতাহাতিতে গড়ায়। রুমী তার মায়ের বাড়িতে চলে যান। কিন্তু জুয়েল রুমীকে ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী নন। দুই পরিবারে এখন রুমী-জুয়েলের বিবাহবিচ্ছেদের কথা চলছে। ওপরের এ উদাহরণটি শুধু জুয়েল আর রুমীরই নয়। এ ধরনের ঘটনা এখন অহরহই ঘটছে বাংলাদেশে। কারও কারও এক দশক বা দুই দশকের বিবাহিত সুখের সংসারও ভেঙে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডিভোর্স-অনলাইন নামে আইনি সহায়তাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, তাদের কাছে ৫ হাজার বিবাহবিচ্ছেদ-বিষয়ক আবেদন জমা হয়েছে। যার মধ্যে ৩৩ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহারের কারণে বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে সুইডেনে ফেসবুক সম্পর্কিত আরেক গবেষণায় দেখা যায়, যারা ফেসবুক বেশি সময় ব্যবহার করেন তাদের প্রায় অধিকাংশই ব্যক্তিগত ও দাম্পত্যজীবনে অসুখী। ব্যবহারকারী অধিকাংশ মেয়ের স্বামী নেই। যাদের আছে, তারা হয় প্রবাসী অথবা সেই দম্পতি নিজেদের মধ্যে কম সময় ব্যয় করে। ব্রিটিশ আইনি সংস্থা ও ডিভোর্স অনলাইন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে সারাবিশ্বে বিবাহবিচ্ছেদের এক-তৃতীয়াংশ ঘটনার জন্য ফেসবুক দায়ী। অন্যদিকে আমেরিকান একাডেমি অব ম্যাট্রিমোনিয়াল লইয়ার্স-এর তথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য থেকে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৭ হাজার ১৫৩টি। তালাক দেওয়ার ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকায় পুরুষের চেয়ে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে এগিয়ে নারীরা। নারীদের ক্ষেত্রে তালাক দেওয়ার হার ৬০ শতাংশ। ঢাকায় চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৯৩৩টি। এর মধ্যে পুরুষরা ১৬৯টি এবং নারীরা ৬৬৪টি বিচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছেন। এক জরিপে দেখা যায়, বিবাহিত ৮৭ শতাংশ নারীই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এসব ঘটনায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে ফেসবুক। এক্ষেত্রে পরকীয়া দায়ী বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
এ সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পরিবারে স্বামীরা প্রবাসে থাকেন। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন ফেসবুক ও মোবাইলের মাধ্যমে তাদের স্ত্রীদের পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এ কারণে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনাও আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।