শিরোনাম
শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
৩০ বছরের পুরনো জাহাজের সংখ্যা ৮২

মেয়াদোত্তীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজ ট্যাংকারে হয় তেল পরিবহন

বাংলাদেশ কোস্টাল তেলবাহী জাহাজের ১৪৭টির মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী জাহাজটি ৩০ বছরের পুরনো। আর সবচেয়ে বেশি পুরনো জাহাজ দুটির বয়স ৬০ থেকে ৬৯ বছর। তেলবাহী এসব জাহাজের অধিকাংশই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় মারাত্দক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এসব জাহাজে। এসব জাহাজ বিআইডব্লিউটিসি, আইডিএলসি বাংলাদেশ লিমিটেড, নজরুল ইসলাম জন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড ও ইন্টার লিজিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের মালিকানাধীন। এর বাইরে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির অধীনে যেসব জাহাজ বা ট্যাংকার রয়েছে সেগুলোরও অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

নৌপরিবহন ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, সিস্টেম লস কমানোর জন্য গত বছরের মাঝামাঝি থেকে ১২ থেকে ১৫ বছরের পুরনো জাহাজে বা ট্যাংকারে তেল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কিন্তু তা আমলে নেয়নি সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থাই। বরং আইন ও বিধি অমান্য করে ৩০ থেকে ৬৯ বছরের পুরনো জাহাজ ও ট্যাংকারে তেল বহন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৮ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটিও ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। বিপিসির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দুই বছর ধরে অবৈধভাবে শ্যালা নদীতে ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটিও ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। বিপিসির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দুই বছর ধরে অবৈধভাবে শ্যালা নদীতে ডুবে যাওয়া ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ জ্বালানি তেল পরিবহন করে আসছিল বলে জানা গেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কোস্টাল তেলবাহী জাহাজের সবচেয়ে পুরনো দুটি হচ্ছে টেকনাফ-১ ও ২। যে দুটি ১৯৪৫ সালে নির্মিত। এরপর জোহরা নামে সাতটি জাহাজ রয়েছে যেগুলো ৬৩ বছরের পুরনো। এমনকি ৩০ বছরের পুরনো জাহাজের সংখ্যাও ৮২টি। এসব জাহাজ প্রতিনিয়তই ঝুঁকি নিয়ে জ্বালানি তেল বহন করছে। এসব জাহাজের প্রতিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। এগুলো চলাচলের সময় অনেক দিন ধরে তেল নিঃসরণ করে, যা নদীর পানিতে মিশে পরিবেশ দূষণ করে। ফলে দেশের নদীপথে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। সূত্র জানায়, ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত শতাধিক তেলবাহী জাহাজ ও ট্যাংকার সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে চলাচল করছে। অথচ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ-এর এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। সূত্র আরও জানায়, তেল পরিবহনসংক্রান্ত কোনো ধরনের নিয়মনীতি না মেনেই মেয়াদোত্তীর্ণ শতাধিক তেলের ট্যাংকার ঝুঁকিপূর্ণভাবে সাগরে ও নদীপথে চলাচল করছে। নিয়ম অনুযায়ী তেলবাহী কোনো জাহাজ সাগরে চলাচল করতে হলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ছাড়পত্র নিতে হয় তা তৈরির আগেই। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের আগেই বিপিসি থেকে ওই ছাড়পত্র নিতে হয়। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ জাহাজ বানানোর চেয়ে তেলবাহী জাহাজ নির্মাণ অনেক ব্যয়বহুল। এ কারণে বিপিসির মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর ছাড়পত্র পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক সময় বিপিসির ছাড়পত্র না নিয়েই তেলবাহী জাহাজ বা ট্যাংকার তৈরির ঘটনাও ঘটছে বলে জানা গেছে।

এ ক্ষেত্রে নৌপরিবহন ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিসি ও বিপিসির তদারকি জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুর্ঘটনা শুধু ওই অঞ্চলের জন্য নয়, পুরো দেশের জীববৈচিত্র্যের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা দায়ী। তিনি বলেন, আগে যেসব চ্যানেলে জাহাজ চলত পরবর্তীতে সেগুলোর আশপাশ চিংড়ি ঘেরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। এ ছাড়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে সেগুলো বন্ধ করে একটি চক্র বাণিজ্য করেছে। ফলে বাধ্য হয়ে সুন্দরবনের ভিতরে অবৈধ রুট চালু করে বিআইডব্লিউটিএ। সরকারের উচিত অতি দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ এসব রুট বন্ধ করে নিরাপদ নৌ রুট চালু করা।

সর্বশেষ খবর