কাউন্সিল অধিবেশনের দুই সপ্তাহ না যেতেই দ্বিধা-বিভক্তি দেখা দিয়েছে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগে। এরই মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ডাকে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ না নিতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে গত বুধবারের বিজয় র্যালিতে অংশ নেননি অধিকাংশ উপজেলার নেতা-কর্মীরা।
জানা গেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী ছিলেন- এমন এমপিরা এ নির্দেশনা দেন। মূলত রাজশাহীর তিন এমপিকে ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এরপরই বিরোধ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, দুজন এমপি বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নেননি। তারা কেন আসেননি বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কমিটি গঠন নিয়ে কোনো বিরোধ নেই বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৬ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি সভাপতি ও আসাদুজ্জামান আসাদ সাধারণ সম্পাদক হন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সভাপতি ও রাজশাহী-৫ আসনের এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট করতে তৎপরতা চালিয়েছিলেন। কিন্তু দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে ভোটাভুটি ছাড়াই জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই পদে নেতা নির্বাচন করেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই সময় হাইকমান্ডের নির্দেশ সবাই মেনে নিলেও ভিতরে ভিতরে বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন পদবঞ্চিতরা। জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানান, ৬ ডিসেম্বর কাউন্সিলের দুই দিন পর ৮ ডিসেম্বর জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় জেলা কমিটির উদ্যোগে ১৭ ডিসেম্বর নগরীতে বিজয় র্যালি করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পোস্টার ও ব্যানার তৈরি করে সব উপজেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়। উপজেলা ও পৌর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের আলাদাভাবে চিঠি দেওয়া হয় র্যালি সফল করতে। তারপরেও অধিকাংশ উপজেলার নেতা-কর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নেননি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী-৫ আসনের এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক জেলা আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ছিলেন। একই নির্বাচনী এলাকার দুর্গাপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনও ছিলেন না। রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন র্যালি বর্জন করেন। ওই নির্বাচনী এলাকার পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াসিন আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মানজালও র্যালিতে যাননি। মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম চিকিৎসার জন্য ভারত গেলেও সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন কবিরাজ র্যালিতে অনুপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নির্বাচনী এলাকার চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলামও ছিলেন অনুপস্থিত।
রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন জানান, জেলা কমিটির দুই নেতা কর্মসূচি নিয়ে তার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। একদিন আগে তাকে ফোনে কর্মসূচি সম্পর্কে জানানো হয়। প্রস্তুতি না থাকায় তিনি র্যালিতে অংশ নিতে পারেননি। তার নির্বাচনী এলাকার অন্য নেতারা কেউ অংশ নেননি কেন-এ প্রসঙ্গে তিনি কিছু জানেন না বলে উল্লেখ করেন। জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছে, গত ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সংসদ সদস্য দারা ও আয়েন নগরীর বন্ধ গেটে আয়েন উদ্দিনের চেম্বারে বসে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করেন। ওই দুই সংসদ সদস্য তাদের নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীদের জেলা আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে যোগ না দেওয়ার নির্দেশ দেন। পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, 'আমাদের এমপি আয়েন উদ্দিন বিজয় র্যালিতে যোগ না দেওয়ার জন্য ফোন করে নিষেধ করেন।' জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, কয়েকজন এমপি নেতা-কর্মীদের র্যালিতে না আসতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। তার পরও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা র্যালিতে অংশ নিয়েছিলেন।