মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল সুন্দরবনে

সংকটাপন্ন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে জাতিসংঘের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিনিধি দল গতকাল বিকালে মংলায় এসে পৌঁছেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও আমির হোসাইন চৌধুরী। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সাতটি দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ২৫ সদস্যের দলটি সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকারডুবিতে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েল নিঃসরণে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। প্রতিনিধি দলটি ক্ষতিগ্রস্ত চাঁদপাই বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যসহ শ্যালা নদী থেকে হরিণটানা খাল পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকা পর্যবেক্ষণ করবে। বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান অ্যামোলিয়া ওয়ালট্রোমের নেতৃত্বে জাতিসংঘের ২৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি চার-পাঁচ দিন মংলার পর্যটন হোটেল পশুরে থেকে সরেজমিন পরির্দশন ও নানা বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে বলে জানা গেছে। গতকাল বিকেলে পলিটিং হোম নামের একটি জলযানে বিশেষজ্ঞ দলটি সরেজমিনে তাদের কাজ শুরু করেছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য দীর্ঘ মেয়াদে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ, ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে করণীয় ও কত দিন সময় লাগবে সেসব বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবে বন বিভাগ। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হওয়ায় এ বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে নারাজ বন বিভাগ।
আন্তর্জাতিক নৌ-রুটটি যে কারণে বিকল : ঘষিয়াখালী-মংলা বন্দর চ্যানেলের নৌরুটটির সঙ্গে ৪৫টি ছোট-বড় নদী ও খাল রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে রয়েছে আরও শাখা-প্রশাখা ৯৭টি খাল। সব মিলিয়ে বর্তমানে এ নৌরুটের সঙ্গে সংযুক্ত নদী-খালের সংখ্যা ১৪২টি। আর প্রায় দেড়শ’ নদী-খালের সব কটিতে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চিংড়িঘের। এ কারণে ঘষিয়াখালী চ্যানেল বন্ধের নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে চিংড়ি চাষের নামে  প্রবহমান নদী-খালে অবৈধ বাঁধ।
বাঁধ অপসারণে কমিটি : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে ১৫ ডিসেম্বর বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক  মো. মাহমুদুর রহমানকে প্রধান করে ১১ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি  ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩০টি ও চূড়ান্তভাবে ১৩টি নদী-খালকে চিহ্নিত করেছে। ১৩টি নদী-খালে আজ থেকে বাঁধ অপসারণের কাজ শুরু করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন কমিটির অন্যতম সদস্য রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাফা মো. আরিফ।
চিহ্নিত ১৩টি নদী-খাল : রামপালের যে ১৩টি নদী ও খাল চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো হলো, পেড়িখালী (পুঁটিমারী) খাল, তারতলার খাল, সিকিরডাঙ্গা ট্যাপা আলীর খাল, সিকিরডাঙ্গা আমতলার খাল, মান্দারতলা খাল, কুমার খাল, রমজাইপুর খাল, চ্যাটার্জি খাল, ওড়াবুনিয়া খাল, রামপাল খাল, দাড়ার খাল, বাশতলীর খাল, নলবুনিয়া খাল।
বিএনপির তদন্ত দল : সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাংকারডুবিতে পরিবেশ বিপর্যয়ের সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে বিএনপির সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল সরেজমিন শ্যালা নদী ও আশপাশের এলাকা পরির্দশন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, পরিবেশবিজ্ঞানী ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মনা, বাগেরহাট জেলা সভাপতি এম এ সালাম ও পরিবেশ সাংবাদিক কামরুল ইসলাম চৌধুরী  শ্যালা নদীর মৃগমারীসহ ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবন ঘুরে দেখেন।
নৌচলাচল বন্ধের দাবি : সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সব ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন, খুলনা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ট্যাংকার থেকে তেল বের হয়ে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে এরই মধ্যে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন : সুুন্দরবন রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশের পাদদেশে ‘বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ’ নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তারা তিনটি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো-সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার যথাসম্ভব ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ও দূষণরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বন ও পরিবেশ ধ্বংসকারী সব প্রকল্প ও চুক্তি বাতিল করতে হবে।

সর্বশেষ খবর