বুধবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

জামায়াত আতঙ্কে সাতকানিয়া আওয়ামী লীগ

জামায়াত আতঙ্কে সাতকানিয়া আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘুদের জন্য আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত উপজেলা সাতকানিয়া। গত এক বছরে এ উপজেলায় জামায়াত-শিবিরের হামলায় নিহত হয়েছেন চার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। জামায়াত-শিবিরের সর্বশেষ শিকার হন আওয়ামী লীগ কর্মী জামাল উদ্দিন। তাদের প্রতিনিয়ত হামলা ও হুমকি-ধমকির কারণে অনেকটা এলাকা ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। গত এক বছরে তাদের হামলায় কয়েকজন নেতা খুনসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের হুমকি-ধমকিতে অনেকেই আজ এলাকা ছাড়া। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।' আওয়ামী লীগের অভিযোগ অস্বীকার করে জামায়াত-শিবির সমর্থিত সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, 'আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলের কারণে খুন ও হামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াত-শিবির কোনো ভাবেই জড়িত নয়।' জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা এলাকায় ফিরে আসার কথা স্বীকার করে সাতকানিয়া থানার ওসি আবদুল খালেদ বলেন, 'বিগত সময়ে নাশকতা মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরেছেন। যদি তারা কাউকে হুমকি-ধমকি দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।' অনুসন্ধানে জানা যায়, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রথম রায় ঘোষণার পর থেকে সাতকানিয়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে সাতকানিয়া। এ সময় আন্দোলনের নামে হাজার হাজার গাছ কাটা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয় শত শত দোকান এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। হামলা করা হয় তিন শতাধিক আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘুর ওপর। টানা হামলা ও হুমকি-ধমকির কারণে অনেকটা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী শূন্য হয়ে পড়েছে উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের সিংহভাগ। জনশ্রুতি রয়েছে, উপজেলার চরতী, ঢেমশা, কাঞ্চনা, কেওচিয়া, এওচিয়া, বাজালিয়া, সোনাদিয়া, সাতকানিয়া সদর, খাগরিয়া এবং মাদার্শা ইউনিয়নে জামায়াতি শাসন চলছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ- বিগত সময়ে নারকীয় তাণ্ডবে জড়িতরা ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট হলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এ পর্যন্ত নামমাত্র আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। কয়েকটি মামলা চূড়ান্ত রিপোর্ট হলেও এতে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের হামলা, নৈরাজ্যের পর জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু পরিবারের অসংখ্য নেতা-কর্মী ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
জানা যায়, গত ২ জানুয়ারি উপজেলার কাঞ্চনা ফুলতলা এলাকায় জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা গুলি ও গলা কেটে হত্যা করে আওয়ামী লীগ কর্মী জামাল উদ্দিনকে। ৩ মার্চ কাঞ্চনা ইউনিয়নের ফুলতলা এলাকায় গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হাসানকে। ২৪ জানুয়ারি কাঞ্চনা আদর্শ গ্রামে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় মো. আলমগীরকে। ২১ জানুয়ারি কেওচিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন চূড়ামনি আদর্শ গ্রাম এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়।

সর্বশেষ খবর