বুধবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা
বিশ্ব ইজতেমা শুরু শুক্রবার

১০ দেশের নাগরিকদের ব্যাপারে সতর্কতা

আগামী ৯ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন ৫০তম বিশ্ব ইজতেমা। বিদেশি ২৫ হাজারসহ ১০ লক্ষাধিক মুসল্লি এবারের ইজতেমায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইজতেমাকে ঘিরে ১০ দেশের নাগরিকের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্দেশে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানসহ ১০ দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদান ও চলাফেরার ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রস্থল কাকরাইল মসজিদের আমির এবং ইজতেমার দায়িত্বশীলদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জামায়াত-শিবিরসহ সরকারবিরোধী নাশকতাকারীরা তাবলিগ জামাতের ছদ্মবেশে নিজেদের আড়াল করছে। তারা ইজতেমা মাঠেও নাশকতা চালাতে পারে। এ তথ্যের ভিত্তিতে কাকরাইলের কেন্দ্রীয় মসজিদের তাবলিগ সংগঠকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ৫ জানুয়ারির রাজনৈতিক ঘটনায় দেশে বিরাজমান সহিংস অবস্থার প্রেক্ষাপটে এবারের ইজতেমার নিরাপত্তায় নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। দুই পর্বের এ ইজতেমাকে ঘিরে থাকছে এক সপ্তাহব্যাপী বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম। পুলিশ ও র্যাব সদর দফতর সূত্র জানায়, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এবারের ইজতেমায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে এসব বিষয়ে সরকারকে আগাম তথ্য দিয়েছে। গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয় ও তাবলিগ জামাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইজতেমা মাঠের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। মুসল্লিদের সুবিধার্থে ইজতেমা শুরুর দিন শুক্রবার থেকে প্রতিদিন ৪টি বিশেষ ট্রেন ছাড়াও আখেরি মোনাজাতের দিন ঢাকা থেকে টঙ্গী, টঙ্গী থেকে ঢাকা, লাকসাম, আখাউড়া, ময়মনসিংহ, ঈশ্বরদীতে ১৫টি ট্রেন চলাচল করবে। এ ছাড়া প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন টঙ্গী রেলস্টেশনে থামবে। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবায় টঙ্গী সরকারি হাসপাতালকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। এ ছাড়া চক্ষু, বার্ন, মেডিসিন, সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞসহ ৬০ থেকে ৭০ জন ডাক্তার সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া বিনামূল্যে ওষুধ ও ১২টি অ্যাম্বুলেন্স ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে।

যে ১০ দেশের ব্যাপারে সতর্কতা : কয়েকদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতে অন্তত ১০টি দেশের নাগরিকদের আসা ও যাওয়ার ভিসার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সতর্কতা আরোপ করা দেশগুলো হলো- পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, সুদান, সিরিয়া, জর্ডান, মিসর ও ইয়েমেন। সূত্র জানায়, দেশের বাইরের জঙ্গি গোষ্ঠী ছাড়াও দেশের সম্ভাব্য নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ সতর্ক আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সূত্র জানায়, এবার ইজতেমা স্থল টঙ্গীর মাঠসহ আশপাশের এলাকায় ৬০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন ও প্রায় ২০ হাজার পুলিশ ও র্যাব সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। স্ট্র্যাকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। ইজতেমা শুরুর তিন দিন আগে অর্থাৎ গতকাল থেকে পুরো এলাকা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ইজতেমা স্থলে বিদেশি মেহমানদের জন্য থাকবে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা। আকাশপথে টহল দেবে র্যাবের হেলিকপ্টার। ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, ৯ জানুয়ারি ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ৫০তম বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বে ইজতেমা ৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্বে ১৬ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৮ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। তিনি জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও ৩২ জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান নেবেন মুসল্লিরা। তুরাগ তীরবর্তী ১৬০ একর বিস্তৃত ময়দানের উত্তর-পশ্চিমে তৈরি হচ্ছে বয়ান মঞ্চ। পশ্চিম প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে বিদেশি মেহমানদের থাকার ঘর। গতকাল সকাল থেকে বিদেশি মেহমানরা ইজতেমায় আসতে শুরু করেছেন।

ইজতেমার স্বার্থে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান আলেমদের : বিশ্ব ইজতেমা সফলতার স্বার্থে বিএনপিসহ সব দলগুলোকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষক সমিতি। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, অবরোধ কর্মসূচি লাগাতার চললে ইজমেতাগামী মুসল্লিরা ভোগান্তির শিকার হবেন। সেই সঙ্গে ইজতেমার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন হবে। তাই ইসলামী মূল্যবোধের পরিচয় দিয়ে বিএনপি অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় বক্তব্য দেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান আতিকী, শায়খুল হাদীস আল্লামা রুহুল আমীন উজানবী, মাওলানা মাসুদুর রহমান বিক্রমপুরী প্রমুখ।

 

 

সর্বশেষ খবর