রবিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

অভিভাবকহীন বিমান

পর্ষদ না থাকায় দরপত্রসহ আর্থিক সব সিদ্ধান্ত বন্ধ

অভিভাবকহীন বিমান

অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বিমান। দীর্ঘ প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে জাতীয় পতাকাবাহী আকাশ পরিবহনের একমাত্র প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসটির পরিচালনায় নেই কোনো পর্ষদ। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক সব ধরনের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। চলতি মাসে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালুর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
জানা গেছে, দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে আর্থিকসংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া যাচ্ছে না। কর্মকর্তাদের একটি অংশ কাজের কোনো দায়িত্ব বুঝে পাননি। অফিসে আসা-যাওয়া ছাড়া তাদের এখন কোনো কাজ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর ৩০ ডিসেম্বর বিমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর আর পর্ষদ গঠন করা হয়নি। পর্ষদ না থাকায় বিমানের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বিমানসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাবলিক লিমিটেডের নিয়ম অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর বিমান পরিচালনা পর্ষদের বার্ষিক সাধারণ সভায় বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিনসহ সব সদস্য পদত্যাগ করেন। সভা শেষে ওইদিনই পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। তারপর তা পুনর্গঠনের অনুমোদনের জন্য একটি সারসংক্ষেপ বিমান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে ফাইল বিমানে ফেরত আসেনি। ওইদিন থেকে বিমান চলছে পর্ষদ ছাড়াই।
বিমানের একাধিক পরিচালক জানান, পর্ষদ ছাড়া বিমান এখন এতিম। গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্তই কারও পক্ষে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় ৫ জানুয়ারি বিমানে যোগদান করেন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত আফ্রিকান এমডি কাইল হেয়্যুড। তিনি এমন এক সময়ে বিমানে যোগ দিয়েছেন যখন বিমানে ছিল না কোনো পর্ষদ। ফলে তিনিও বিপাকে পড়েন। তিনি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত এমডি ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। তবে মোসাদ্দিককে কোথায় কোন দায়িত্বে ফেরত পাঠানো হবে, সে সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ৫ জানুয়ারি থেকে মোসাদ্দিক আহমেদের কোনো কাজ নেই। তার মতো আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন। সূত্র জানায়, পর্ষদ না থাকায় চলতি মাসে বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই বিমানের একটি টিমের মিসর টার্বো প্রপ উড়োজাহাজ পরিদর্শনে যাওয়ার শিডিউল ছিল। ওই টিম মিসরে যেতে না পারায় উড়োজাহাজ আসছে না পূর্বনির্ধারিত সময়ে। ফলে চলতি মাসে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে বড় বড় দরপত্র, আর্থিকসংক্রান্ত অনুমতি, মার্কেটিং শাখার অগ্রগতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ঝুলে রয়েছে। এ-জাতীয় সিদ্ধান্তের এখতিয়ার একমাত্র বিমান পর্ষদের। এদিকে বিমান সূত্র জানিয়েছে, নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আবারও মনোনীত হচ্ছেন বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন আহমেদ। এ-সংক্রান্ত ফাইলটি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে রয়েছে। দু-তিন দিনের মধ্যে পর্ষদ পুনর্গঠনসংক্রান্ত ফাইলটি দফতর থেকে ছাড় পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গত রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি ফাইল সই করে বেশ কিছু দিন আগেই পাঠিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে। এখন ফাইলটি সেখানেই রয়েছে। বিলম্ব কেন হচ্ছে, তা প্রধানমন্ত্রীর দফতর বলতে পারবে। তবে ফাইলটি সম্ভবত এ সপ্তাহে সেখান থেকে চলে আসবে বলে জানতে পেরেছি।’

সর্বশেষ খবর