সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা
আখেরি মোনাজাত

মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা

মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে গতকাল মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয় -রোহেত রাজীব

মুসলিম উম্মাহ, বিশ্ববাসী ও দেশের শান্তি এবং কল্যাণ কামনায় আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে গতকাল শেষ হলো ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। গতকাল বেলা ১১টা ২২ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। শেষ হয় ১১টা ৫৪ মিনিটে। দিল্লির তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন।
৩২ মিনিটের মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি মহান আল্লার কৃপা ও নৈকট্য কামনায় আমিন আমিন ধ্বনি বলে কাঁদতে থাকেন। লাখ লাখ মুসল্লি মাঘের কনকনে শীত উপেক্ষা করে মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় পুরো টঙ্গী এলাকা ধর্মপ্রাণ লাখো মুসল্লির আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। আল্লাহুম্মা আমিন ধ্বনি উচ্চারিত হয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো বিশ্ব ইজতেমার বিশেষ মোনাজাত সরাসরি সম্প্রচার করায় দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বাসাবাড়ি, দোকান, অফিস-আদালত ও নিজ নিজ অবস্থান থেকে মোনাজাতে শরিক হন। তারা মহান আল্লাহর সান্নিধ্য, সন্তুষ্টি লাভ আর নিজের চাওয়া-পাওয়াকে আল্লাহর কাছে তুলে ধরে কায়মনে প্রার্থনারত মুসল্লিদের এ সময় অঝরে কাঁদতে দেখা যায়। এ ছাড়া মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তা, দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য শান্তি, কল্যাণ ও নাজাত কামনা করা হয়। এর আগে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-হরতাল আর প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে ৩৪ জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লির ঢল নেমেছে টঙ্গীর তুরাগতীর ইজতেমা ময়দানে। আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে তাই ভোর রাত থেকে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে মুসল্লিদের ঢল দেখা যায়। বিভিন্ন বাহনে চেপে পায়ে হেঁটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এবং ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলো থেকে মুসল্লিরা টঙ্গীর তুরাগতীরে আসতে থাকে। এদিকে মোনাজাতে অংশ নিতে সকাল পৌনে ৮টায় ইজতেমাগামী দুই মুসল্লি রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মারা যান। তারা হলেন মুজিবর রহমান ও খলিলুর রহমান। টঙ্গী এলাকায় এক মুসল্লি ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন। তার নাম জানা যায়নি। ইজতেমাস্থলে নিরাপত্তা ছিল চোখেপড়ার মতো। ইজতেমা ময়দানে ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়। র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা এসব টাওয়ার থেকে ইজতেমাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরায় ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আকাশে হেলিকপ্টার ও তুরাগ নদে স্পিডবোটের টহলও জোরদার ছিল। গতকালের বৃষ্টিতে ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের রাস্তাঘাটে পানি জমে কিছুটা কর্দমাক্ত হয়। খোলা আকাশের নিচে, কাদা মাটিতে চলাফেরাসহ অজু ও গোসলে নানা দুর্ভোগে পড়েন মুসল্লিরা। তারপরও মুসল্লিদের তেমন আক্ষেপ নেই। তারা বলছেন, দীনের পথে মেহনত করতে এসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকতেই পারে। ইজতেমা আয়োজক কমিটির নেতারা বলেছেন, স্থান সঙ্কুলানসহ বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ২০১১ সাল থেকে দুই দফায় বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে। ১৬০ একর ইজতেমা ময়দান পেরিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আশপাশের রাস্তা, অলিগলিসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানুষের ঢল নামে। আখেরি মোনাজাতের আগে গতকাল সকাল ১০টা থেকে চলে হেদায়েতি বয়ান। হেদায়েতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সা’দ। উর্দু ও হিন্দি ভাষার হেদায়েতি বয়ানের অনুবাদ করেন ঢাকার মাওলানা মো. জোবায়ের আহমেদ ও ওয়াসিফুর ইসলাম। বয়ানে তিনি আল্লাহর রাস্তায় (তবলিগে) দাওয়াতি কাজে হেঁটে মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, হেঁটে বেশি মানুষকে দীনের দাওয়াত দেওয়া সম্ভব হবে। এতে পায়ে যে ধুলাবালু লাগবে, তা জাহান্নামের আগুনকে ঠাণ্ডা করে দেবে। মোনাজাতে যা বলা হয় : হে আল্লাহ আমাদের অন্তর থেকে কুফরি, মোনাফেকি দূর করে দাও। তোমার নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দাও। হে আল্লাহ, আমাদের সব নেক চাহিদা পূরণ করে দাও। হে রাহমানুর রাহিম আমাদের ওপর রহম কর। আমাদের রোগব্যাধি থেকে মুক্তি দাও। হে আল্লাহ দুনিয়ার সব বালা-মসিবত থেকে আমাদের হেফাজত কর। নবীওয়ালা জিন্দেগি আমাদের নসিব কর। ইজতেমাকে কবুল কর। কবুল কর। ইজতেমার আয়োজনে যারা শ্রম দিয়েছেন তাদের কবুল কর। যারা তোমার কাছে হাত তুলেছে সবাইকে তুমি কবুল কর।
সমাপনী বয়ান : মোনাজাত-পূর্ব বয়ানে দিল্লির মাওলানা সা’দ সমবেত মুসল্লির উদ্দেশে বলেন, হে ভাই, মানুষ আজ দাওয়াতে মেহনতের কাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। দাওয়াতে মেহনত না থাকলে মানুষের আমল কমজোর হয়। আর আমল কমজোর হচ্ছে বলেই দোয়া কবুল হচ্ছে না। দোয়া আল্লাহর দরবারে পৌঁছছে না। আল্লাহর কাছে হাত উঠিয়ে কান্নাকাটি করে চোখের পানি ফেললে আল্লাহ ফরিয়াদকারীর সেই হাত খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান।
১২ কি.মি এলাকায় যানজট : বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের চারপাশে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তীব্র যানজট লেগে থাকে। তিন দিনব্যাপী এই দ্বিতীয় জমায়েতের শেষ দিনে গতকাল মোনাজাতে শামিল হতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান, জিপ, কার, রিকশা-ভ্যান এবং নৌকাসহ নানা ধরনের যানবাহনে এবং পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে পৌঁছেন। এ ছাড়া ভোর থেকেই ইজতেমা ময়দানের দক্ষিণে খিলক্ষেত, বিশ্বরোড থেকে এবং উত্তরে গাজীপুর চৌরাস্তা, পূর্বে পূবাইল, পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত রিকশাসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখার ফলে সকাল থেকেই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে ইজতেমা অভিমুখে ছুটতে থাকে মুসল্লিদের কাফেলা। এ ছাড়া দুপুর ১২টায় মোনাজাত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টঙ্গী কামারপাড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আবদুল্লাপুর-আশুলিয়া, টঙ্গী-কালিগঞ্জ সড়কসহ প্রায় ১২ কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে অবরোধের কারণে গাড়ি সংকট থাকায় গাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে পরিবহন মালিকরা। কুমিল্লা থেকে আসা এক মুসল্লি আবদুস সাত্তার মিয়া বলেন, আসার সময় অনেক কষ্ট করে এসেছি। যাওয়ার সময় দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকছে।

সর্বশেষ খবর