সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফের অতিকথনে ব্যস্ত মন্ত্রীরা

সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অতিকথনে সরকার বেকায়দা পড়েছে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সরকার যা করবে ত্বরিত করা উচিত। কিন্তু মন্ত্রীদের অতিকথনে সেটা হচ্ছে না। সরকারের এক বছর পূর্তিতে ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোট ঢাকায় সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকারের কাছে তথ্য ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সমাবেশকে ঘিরে নাশকতা হতে পারে। অস্থিতিশীল করা হতে পারে রাজধানী ঢাকাকে। এই তথ্য জানার পর সরকার বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়নি। উল্টো বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ক্ষুব্ধ বিএনপি নেত্রী ৫ জানুয়ারি বিকালেই সংবাদ মাধ্যমে জানিয়ে দেন, দেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলবে। তারপর থেকে গত ১৪ দিন ধরেই সারা দেশে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই অবরোধকারীদের পেট্রলবোমার শিকার হচ্ছেন নিরীহ জনগণ। এই অবস্থায় সমস্যা সমাধানের পথ না খুঁজে, আলোচনা বা সংলাপের দিকে না গিয়ে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে না এনে সরকারের মন্ত্রীরা ব্যস্ত অতিকথনে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে সরকার যা করবে তা কথা না বলে দ্রুতই করা উচিত। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অতিকথনে সরকারের সব কর্মকাণ্ডই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত কয়েকদিনে কয়েকজন মন্ত্রী বেশুমার অতিকথন করেছেন। অতিকথনে এগিয়ে আছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম গত ১৩ জানুয়ারি বলেন, মা-বেটার হঠকারী সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ (স্বাচিপ) আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
গত শনিবার খাদ্যমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের এ অনুষ্ঠানে বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে পালিয়েও বিএনপি পার পাবে না। বিএনপি যে আন্দোলন করছে তার জন্য অচিরেই তাদের এর খেসারত দিতে হবে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিএনপি আন্দোলনের নাম মুখেও আনতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এ সময় তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যে কথা বলেছেন সেজন্য তাদেরকে আমি স্যালুট জানাই। বিজিবি প্রধানের বক্তব্যে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বক্তব্য একই সূত্রে গাঁথা। বিএনপি সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার জন্য সমাবেশ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদেরকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। হেফাজতকে সমাবেশ করতে দিয়ে সরকার একবার ভুল করেছিল, সে ভুল আর করবে না। ন্যাড়া একবারই বেল তলায় যায়।
গতকাল গাইবান্ধায় ১৪ দলের এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে খালেদা জিয়ার বিচার করা হবে। আর নির্বাচনের আগে খুনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো সংলাপের সম্ভাবনা নেই। পেট্রলবোমা মেরে বাসে আগুন দিয়ে বিএনপির সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করছে। এর দায়ভার খালেদা জিয়াকে নিতে হবে। গত ১৪ জানুয়ারি ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মেরুদণ্ডহীন বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়। যে দলের নেত্রীর ডাকে নিজ দলের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নামে না তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ?
গতকাল বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে খেজুর বাগান এলাকায় বাসে পেট্রলবোমা মেরে অগ্নিসংযোগে ইডেন কলেজের দগ্ধ ছাত্রীদের দেখতে এসে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, যারা বাসে অগ্নিসংযোগ করছে, মানুষ মারছে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে এসব নাশকতাকারীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা মানবতাবিরোধী। এই পশুদের নতি শিকার করতেই হবে। হামলাকারীরা চোরাগোপ্তা হামলা করে পালিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আজকে খালেদার নিরাপত্তা তুলে দেওয়া হলে তার ওই বাড়ির একটি ইটও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এত কিছুর পরও প্রধানমন্ত্রী তার নিরাপত্তা দিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাই। ওনার বাড়ির নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হোক। বিএনপিকে উদ্দেশ করে মায়া বলেন, আর কোনো সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না। এ জন্য আমরা ১৪ দলকে সঙ্গে নিয়ে নাগরিক কমিটি করছি। এ কমিটি পাড়ায়-মহল্লায় সন্ত্রাস নির্মূল করবে।
প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ১৩ জানুয়ারি বলেন, নাশকতা, নৈরাজ্য বন্ধ করে জঙ্গিগোষ্ঠীকে ত্যাগের লিখিত ঘোষণা দিলে সংলাপ হতে পারে। জামায়াতকে ত্যাগ করতে হবে।
গত কয়েকদিনে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বিভিন্ন রকম কথা বলেছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মহানগর কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বলেছেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী দল। জাতিসংঘ আহ্বান জানিয়েছে তাদের সঙ্গে সংলাপ করার। কিন্তু আইএস এবং আল-কায়েদার সঙ্গে যেমন সংলাপ হয় না, তেমনি তাদের সঙ্গেও কোনো সংলাপ হবে না। আইএস এবং আল-কায়েদার মতোই বিএনপিকে নির্মূল করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যারা ককটেল, বোমা হামলা চালায়, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তাদের দমন করতে যা যা করা দরকার তাই করা হবে। একই দিনে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু মংলায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, যারা ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র দেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করেছিল ওই চক্র এখনো অযৌক্তিক দাবি তুলে দেশকে অকার্যকর ও রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি করার চক্রান্ত করছে। যে কোনো মূল্যে ওদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেওয়া হবে।
একই দিনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে একটি রাজনৈতিক দল যা করছে এটা সন্ত্রাস। সন্ত্রাস দমনে আইন আছে। এ আইন প্রয়োগ করা হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা প্রসঙ্গে বলেন, ওই দিন খালেদা জিয়াকে আটকানো না হলে ৫০০ লোক মারা যেত। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি মন খারাপ করবেন না, বয়স হলেও রাগলে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগে।

সর্বশেষ খবর