সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

মাটি খুঁড়লেই গুপ্তধন!

মাটি খুঁড়লেই গুপ্তধন!

নওগাঁর পোরশা উপজেলা সদরের টেকঠা এলাকার মাটি যেন সোনার চেয়েও দামি হয়ে উঠেছে। পুনর্ভবা নদীর পূর্ব পাড়ে এই এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটারের মধ্যে যে কোনো জায়গা খুঁড়লেই মিলছে নানা প্রকার গুপ্তধন। এর মধ্যে আছে ছোট-বড় অনেক রকমের পাথর, স্বর্ণালঙ্কার, চেইন, ধাতব মুদ্রা, তাবিজ, রুপার কলম ছাড়াও আরও অনেক কিছু। আর এই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে দুই বছর ধরে। ১০০ থেকে ১৫০ জন মানুষ প্রতিদিন মাটি খুঁড়ে কিছু না কিছু পাচ্ছেই। জিনিসের মান অনুযায়ী এগুলো ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বছর দুয়েক আগে এক ব্যক্তি টেকঠা নামক ভিটা এলাকায় মাটি কাটতে গিয়ে কিছু মূল্যবান সম্পদ পান। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় শত শত লোকের মাটি খনন। প্রায় চার থেকে পাঁচ ফুট মাটি খুঁড়লেই মিলছে মূল্যবান জিনিস। যে পাথর পাওয়া যায় তার একেকটির রং একেক রকম। সেগুলো বিক্রিও হচ্ছে। ক্রেতার অভাব নেই।স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা আমির উদ্দিন জানান, ওই গ্রামটিতে এক সময় হিন্দু সম্প্র্রদায়ের মানুষ বসবাস করত। সেখানে একটি বড় কালীমন্দির ছিল। মন্দিরে নিয়মিত পূজা-অর্চনা করা হতো। এই মন্দিরকে ঘিরে এখানে হাটবাজার বসত। দেশ ভাগের সময় হিন্দুরা ভারতে চলে যায়। তারা হয়তো তাদের মূল্যবান অনেক জিনিস নিয়ে যেতে পারেনি। সেগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে। ওই গ্রামের ইতিহাসবিদ হুমায়ন রেজা জানান, প্রায় ৬৫০ বছর আগের সম্রাট শের শাহের আমলে সমগ্র ভারতবর্ষ ৪৭টি পরগনায় বিভক্ত ছিল। তার মধ্যে একটি পরগনা হলো পোরশার পাশের গোমস্তাপুরের রোকনপুর। পরে বাংলার সুবাদার হন সুজা। সে সময়ে নৌকা বা জাহাজযোগে বহু মালামাল এখানে আমদানি ও রপ্তানি হতো। পরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সম্পদগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। পার্শ্ববর্তী গ্রাম বিষ্ণপুর থেকে আসা মনিরুল ইসলাম জানান, কয়েক দিন তিনি মাটি খুঁড়েছেন। সেখানে একটি জালিবল পেয়েছেন। তা বিক্রি করেছেন ছয় হাজার টাকায়। নিতপুর থেকে আসা রুস্তম আলী চকচকে কাচ টুকরোর মতো একটা বস্তু পেয়েছেন। তা ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এর আগে কয়েকটি দামি পাথর পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলোর কোনোটি ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। অনেকে স্বর্ণালঙ্কার পেয়েছেন। তবে যারা স্বর্ণিল জিনিস পেয়েছেন তা নিজের কাছেই রেখেছেন।
তবে এলাকার রইচ উদ্দিন অভিযোগ করেন, মানুষ মাটি খুঁড়ে অনেক মূল্যবান সম্পদ তুলে নিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন তা বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি সরকারি উদ্যোগে খননেরও দাবি জানান। এ বিষয়ে পোরশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন শামীম জানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর