বুধবার, ১৮ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
সিটি করপোরেশন নির্বাচন

ওয়ার্ল্ডক্লাস সিটি হবে ঢাকা

সাঈদ খোকন

ওয়ার্ল্ডক্লাস সিটি হবে ঢাকা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন। দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি কীভাবে ঢাকা দক্ষিণকে গড়তে চান, কীভাবে নাগরিক সমস্যার সমাধান করবেন ইত্যাদি বিষয় ছাড়াও তিনি ঢাকাকে নিয়ে কী পরিকল্পনা করছেন সে বিষয়ে গতকাল কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে।
রাজধানীর বনানীর বাসায় একান্ত সাক্ষাৎকারে সাঈদ খোকন বলেন, ‘বিভিন্ন জরিপে ঢাকাকে একটি বসবাসের অযোগ্য নগরী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে প্রথম বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তুলব। এরপরই ঢাকাকে একটি ওয়ার্ল্ড ক্লাস সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে সবধরনের উদ্যোগ নেব।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচক ও পত্রিকায় দেখেছি, ঢাকা শহর বর্তমানে বসবাসের অযোগ্য। সিটি করপোরেশনের সেবাগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাব। রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, স্যুয়ারেজ, বিশেষ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর রাখা হবে।’ রাজধানীবাসীর জন্য যথাসময়ে সেবা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, ‘জন্ম, মৃত্যু, চারিত্রিক সনদ ও ট্রেড লাইসেন্স নিতে গিয়ে মানুষ হয়রানির শিকার হয়। তবে আর এ হয়রানি হতে দেওয়া হবে না। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে এবং মাদকসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে দ্রুত কাজ করব।’ সিটির সেবা খাতের সমন্বয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ঢাকার মেয়র থাকা অবস্থায় সিটি গভর্নমেন্টের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আমলতান্ত্রিক জটিলতার কারণে করতে পারেননি। সেবামূলক কাজগুলোর মধ্যে একটি সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। আমি যদি নির্বাচিত হই তা করব।’ তিনি বলেন, ‘একটি আদর্শ নগরীর জন্য নগর সরকার কার্যকর ব্যবস্থা। আমার মরহুম বাবা মেয়র মোহাম্মদ হানিফ প্রথম সিটি গভর্নমেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে বাস্তব অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগান। নগর সরকার সব কাজের সমন্বয় করবে। এখন টেলিফোনের তারের জন্য একবার রাস্তা খোঁড়া হয়। আবার একই রাস্তা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনের জন্য পৃথক পৃথক সময়ে কাটা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে, অন্যদিকে অর্থের ব্যাপক অপচয় হচ্ছে। নগর সরকারব্যবস্থা হলে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে একবারে এসব কাজ করা যাবে। ঢাকার কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত করতে এ ব্যবস্থার ওপর জোর দেব।’ জনগণের জন্য প্রতিশ্রুতির বিষয়ে জানতে চাইলে এই মেয়র প্রার্থী বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছি। অনেকদুর এগিয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন তারিখ ঘোষণা করলে সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। সেখানে কমপক্ষে ৫০টি একশ্যান প্ল্যান থাকবে। মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে দলের অভ্যন্তরের সমস্যা সমাধান কিভাবে করবেন- প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। সমস্যা তেমন নেই। তবে যা সৃষ্টি হচ্ছে, সেগুলো দলের নীতি নির্ধারকরা দ্রুত সমাধান করে দেবেন। কাজের ক্ষেত্রে যে অন্তরায়গুলো সৃষ্টি, সেগুলোর সমাধান হবে। আওয়ামী লীগ একটা বিশাল রাজনৈতিক দল। এ দলে একটি পদের জন্য একাধিক ব্যাক্তির প্রতিযোগিতা করার নজির রয়েছে। কিন্তু দল থেকে যেখানে আমাকে সমর্থন দেয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে দলীয় লোকজন আমার পক্ষেই থাকবেন।  তিনি বলেন, আমরা যদি এ সরকারের সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সব স্তরের নির্বাচনের দিকে তাকাই, তাহলে  দেখব- প্রতিটি নির্বাচনই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়েছে। দলীয় প্রভাব থাকলে বড় সিটিগুলোতে অন্য দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হতো না। নির্বাচন নিয়ে কোনো সহিংসতার আশঙ্কা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ধারণা বিএনপি যথাসময়ে নির্বাচনে চলে আসবে। তখন আর কোনো সহিংসতা হবে না। তবে আমি চাই একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হোক। ২০ দলীয় জোট নির্বাচন নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। বিএনপি  জোটের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, তারা যেন সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসেন। এ ভাবনাটা যেমন নাগরিক হিসেবে আমার মধ্যে রয়েছে তেমনি সব নগরবাসীর মধ্যেও রয়েছে। তারা নির্বাচনে অংশ নিলে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। নারীদের বিশেষ নিরাপত্তার বিষয়ে এই মেয়র প্রার্থী বলেন, নারীদের নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক সংসার ভাঙে। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে তালাককে নিরুসাৎসিত করবো। সালিশের আওতায় মিমাংসা করা হবে। হঠাৎ করে যেন নিরাপত্তাহীনতা না হয় সে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে বৃদ্ধদের জন্য ওল্ড হোম গড়ে তোলাসহ মেধাবীদের পড়া-লেখার জন্য বিশেষ  পরিকল্পনার কথাও ভাববো। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ মুহূর্তে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের বিষয়ে সাঈদ খোকন বলেন, ইতিমধ্যেই আমি শুনেছি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আর্থিক সংকটের কথা। অনেক সময় কর্তৃপক্ষকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দিতে হিমশিম খেতে হয়। আবার ঠিকাদারদের বিলের টাকাও বকেয়া রয়েছে। এ অবস্থায় আমি মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে আয় বাড়িয়ে পরিকল্পনামাফিক এসব সমস্যার সমাধান করার উদ্যোগ  নেব। রাজনৈতিক নেতা-কর্মিদের দখলবাজি-টেন্ডারবাজি বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোনো অনিয়মের ব্যাপারে আমার সব সময় জিরো টলারেন্স থাকবে। জনগণের সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ছাড়  দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বাবার অনুপস্থিতিতে ২০০৬-০৭ সাল থেকেই মূলত মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। সেই  থেকে নগরবাসীর সুঃখ-দুখ অনুধাবন করার চেষ্টা করছি। ঢাকাবাসীর সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আমার নানা মাজেদ সরদার ছিলেন ঢাকার শেষ সরদার। বাবা প্রথম নির্বাচিত মেয়র। দীর্ঘ ২৫ বছর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মানুষের সুখে-দুঃখে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। মানুষও তাঁর জন্য অনেক কিছু উৎসর্গ করেছেন। বাবার চিন্তা-চেতনা আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা  দেয়। নগরবাসী আজও শ্রদ্ধাভরে তাঁদের প্রিয় নগরপিতাকে স্মরণ করেন। আমি নগরপিতা নয়, সন্তান হিসেবে মানুষের পাশে থাকতে চাই।

সর্বশেষ খবর