বুধবার, ১৮ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রতিহিংসার আগুনে আর যেন কারও মৃত্যু না হয়

প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিহিংসার আগুনে আর যেন কারও মৃত্যু না হয়। আমরা চাই না এদেশে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হোক, শিশুদের পুড়িয়ে মারা হোক, অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের পুড়িয়ে মারা হোক। আমরা চাই শিশুদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ ও পরিবেশ। গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধের পাবলিক প্লাজায় আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। এরপর তিনি ফিতা কেটে তিন দিনব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন করেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসন আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। বিশ্ব দরবারে আমরা পরিচিতি পেয়েছি। আমরা একটি দেশ পেয়েছি। জাতির পিতা শিশুদের খুব ভালোবাসতেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রতিটি শিশু লেখাপড়া করবে, এদেশের নেতৃত্ব দেবে। এস এম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশুরা ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।  শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন- এদেশে কোনো শিশু না খেয়ে ও বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতার সঙ্গে শিশু রাসেলকেও হত্যা করা হয়েছে। রাসেল টুঙ্গিপাড়ায় এসে ছোট শিশুদের নিয়ে খেলাধুলা করত। তাদের নিয়ে একসঙ্গে খাবার খেত। বঙ্গবন্ধুর মতো শিশুদের সে খুব ভালোবাসত। এখানে আগত শিশুদের দেখে আমি শেখ রাসেলের কষ্ট দূর করি। সেদিন আমরা শুধু জাতির পিতাকে হারাইনি। আমরা জাতির পিতার আদর্শকে হারিয়েছি। তাই জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে এ দেশটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক শিশুকে লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে হবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন। শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, মসজিদ ও মন্দির ভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি।
কোনো অভিভাবককে যাতে বই কিনতে না হয় এ জন্য আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণ করছি। প্রাক-প্রাথমিক থেকে এসএসসি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। গরিব শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিশুদের জন্য টিফিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গরিব শিক্ষার্থীর মায়েদের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। যাতে ছেলেমেয়েদের সঠিকভাবে স্কুলে পাঠাতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শিশুদের উদ্দেশে বলেন, জীবনে বড় হতে হলে লেখাপড়া শিখতে হবে, মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। গরিব ও প্রতিবন্ধী শিশুদের অবহেলা করা যাবে না। তাদেরকে তোমরা কাছে টেনে নেবে, আদর করবে, ভালোবাসবে। মাধ্যমিকে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিকেও কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। মাল্টি মিডিয়া ক্লাসরুম ও আইসিটি চালু করা হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই ই-বুকে রূপান্তর করা হয়েছে। এতে আমাদের শিশুরা যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। তারা আধুনিক প্রযুক্তি শিখে নিজেকে গড়ে তুলবে। তাহলে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে নিজেকে তৈরি করতে পারবে।
সকাল সোয়া ১০টায় প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন তারা। এরপর সেখানে রক্ষিত মন্তব্য বইতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য লেখেন। পরে দলীয় প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বেলা সাড়ে ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শিশু সমাবেশে যোগ দিয়ে সুন্দর হাতের লেখা, চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃত্তি ও উপস্থিত বক্তৃতায় বিজয়ীদের ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করেন। পরে তিনি শিশু দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দর্শক সারিতে বসে উপভোগ করেন। বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন।

সর্বশেষ খবর