শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
সম্ভাবনার বাংলাদেশ

পর্যটন খাত বদলাতে পারে দেশের চেহারা

পর্যটন খাত বদলাতে পারে দেশের চেহারা

পর্যটন খাতের আয় বদলে দিতে পারে দেশের চেহারা। পাঁচ বছরে এ খাত থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। ২০১৮ সাল নাগাদ জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ১ হাজার ৯৯ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এটা হবে বৈদেশিক আয়ের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময় পর্যটন খাতে কর্মসংস্থানের সংখ্যা বেড়ে ৩৭ লাখ ৯১ হাজারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সুযোগ-সুবিধার অভাব, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাহীনতা এবং অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যটন খাতকে বরাবরই বাধাগ্রস্ত করে। এরপরও সরকারি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে পর্যটন শিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। কী নেই বাংলাদেশে? বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন, একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যান্ত অবলোকনের সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা, সবুজ নয়নাভিরাম চারণভূমি সিলেট, আদিবাসীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও পাহাড়ঘেরা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, সমৃদ্ধ অতীতের সাক্ষী উত্তরাঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো। বাংলাদেশ স্বল্প আয়তনের হলেও পর্যটন আকর্ষণে যে বৈচিত্র্য তা সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ২০১২ সালে শুধু পর্যটন শিল্প দিয়ে ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার রাজস্ব আয় করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পর্যটন করপোরেশনের তথ্যে জানা গেছে, পর্যটন খাত থেকে ১৯৯৯ সালে ২৪৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা আয় আসে। ২০০৯ সালে পর্যটক আসে ১ লাখ ২৯ হাজার এবং এ খাতে আয় তিন গুণ বেড়ে ৬১২ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজারে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ ট্যুরিজম কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, তিন বছরে গড়ে পাঁচ লাখ পর্যটক এসেছে বাংলাদেশে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। পর্যটন শিল্পের বিভিন্ন লিংকেজ সেক্টর, যেমন- পরিবহন, হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট, এয়ারলাইন্সসহ অন্যান্য মাধ্যম থেকে প্রচুর রাজস্ব আয়েরও নিশ্চয়তা রয়েছে। পর্যটন করপোরেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবাসন সুবিধা, অবকাঠামো সংস্কার, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে ২০২১ সালের মধ্যে পর্যটন খাত অন্যতম সমৃদ্ধশালী শিল্পে পরিণত হবে। বাংলাদেশে অসংখ্য পর্যটন স্পট রয়েছে। শীর্ষ ২০টি স্পটে পর্যটকদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে সবার আগে উঠে আসে কক্সবাজারের নাম। এরপর সুন্দরবন। এ ছাড়া কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিন, সোনার চর, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, মাধবকুণ্ড, জাফলং, ময়নামতি শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, দিনাজপুরের স্বপ্নপুরীতে পর্যটকরা ভিড় করেন বেশি। মধুপুর গড়, ভাওয়াল গড়, শেরপুরের গাজনী, গারো পাহাড়ি জনপদ মধুটিলা, বিরিশিরি এলাকাও চমৎকার পর্যটন স্পট। ইকো পার্ক ও সাফারি পার্কগুলোও পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় বান্দরবানের নীলাচল ও খাগড়াছড়ির সাজেক হিল রিসোর্ট অন্যতম পর্যটন মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে আদিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যেও পর্যটন সম্পৃক্ততা সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। তারা নিজ বাড়ির সঙ্গেই রংবেরঙের ঘর তুলে পর্যটকদের সীমিত মূল্যে অবস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছেন। সীমিত টাকায় মিলছে গাইড। অন্যান্য পর্যটন রিসোর্ট এলাকায়ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যটন সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব বলে পর্যটকরা মনে করেন। পর্যটন বিকাশে পর্যটন করপোরেশনের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি বর্তমানে কমপক্ষে ১৫টি বেসরকারি ট্যুর অপারেটর ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাপানের অর্ধশতাধিক সংস্থার সঙ্গে একত্রে কাজ করছে। বেসরকারি কয়েকটি সংস্থা প্রাইভেট রিসোর্ট গড়ে তুলে পর্যটন খাতে অবদান রাখছেন। তবে দেশি পর্যটকরা অভিযোগ করেন, প্রাইভেট রিসোর্টসমূহের সব কিছুই অত্যধিক চড়া দামে ব্যবহার করতে হয়। অসম এ মূল্য তালিকার বাণিজ্য দেখার কেউ নেই। ফলে অতিমাত্রার খরচ পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, সরকার পর্যটনের কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে ২০১৬ সালকে ‘পর্যটন বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক পর্যটনমেলায় অংশগ্রহণ, পর্যটন খাতে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর পর্যটনসেবা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয়মূলক কর্মকাণ্ড, বিদেশে দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে পরিচিতিমূলক পুস্তিকা ও সিডি সরবরাহ, গণমাধ্যমে প্রচারণা, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু, ইনানি থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন গঠন প্রভৃতি। তবে পর্যটন খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, অনেক পদক্ষেপের ঘোষণা এসেছিল। বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখা যায়নি। কক্সবাজারের মতো ট্যুরিস্ট জোন এলাকায়ও পর্যটকরা ছিনতাইসহ নানা রকমের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বিশেষত নারী ও বিদেশি পর্যটকদের নিরুদ্বিগ্নভাবে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ থাকে না মোটেও। ফেরিওয়ালাদের উৎপাত, জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যও পর্যটকরা নিরুৎসাহিত হন। সমুদ্রসৈকতের এখনো ১২০ কিলোমিটার এলাকা ব্যবহারযোগ্য করা যাচ্ছে না। কক্সবাজার লাবণী পয়েন্টের বড়জোর চার কিলোমিটার সৈকত এলাকা পর্যটকদের বেড়ানোর উপযোগী, বাকি সব পরিত্যক্ত। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, পর্যটন একটি বহুমাত্রিক শিল্প হওয়ায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি উন্নত অবকাঠামো, সঠিক পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থা গড়ে তোলা গেলে ২/৪ বছরেই পর্যটনকে সমৃদ্ধ শিল্পে পরিণত করা যাবে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে ২৯ লাখ লোক এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। দিন দিন সংখ্যা বাড়ছে।
 বিদেশিদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরাও ঘুরতে বের হচ্ছেন। জিডিপিতে পর্যটন শিল্পের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে প্রচারণার দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি বলে মন্তব্য করেন বিপিসি চেয়ারম্যান। তিনি জানান, জনবল সংকটের কারণেও অনেক কার্যক্রম যথাযথভাবে চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

সর্বশেষ খবর