শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
বরিশাল

আত্মগোপনে ২০ দলের দুই হাজার নেতা-কর্মী

আত্মগোপনে ২০ দলের দুই হাজার নেতা-কর্মী

বরিশালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা। গত বুধবার কেন্দ্রঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি থাকলেও বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০ উপজেলায় ২০ দলের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি কোথাও। মহানগরে পুলিশের দায়ের করা ২২ মামলায় ৬৪৪ জন এবং জেলায় ২৫ মামলায় ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী আসামি হয়ে গ্রেফতারের হুলিয়া নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এসব মামলায় ইতিমধ্যে ১৮৩ নেতা-কর্মী গ্রেফতারও হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে জামিনে মুক্তি পেলেও নাশকতার মামলায় কারাভোগ করছেন শতাধিক নেতা-কর্মী। তবে সিনিয়র নেতারা গ্রেফতার না হলেও প্রায় আড়াই মাস ধরে ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এমনকি তাদের মুঠোফোন বন্ধ। এর মধ্যেও জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের গুটিকয় নেতা-কর্মী ২০ দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সমর্থনে মাঝেমধ্যে নগরীতে ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল করে তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে আত্মগোপনে থাকা জেলা (উত্তর) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘আগে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন দমানোর জন্য বিভিন্ন সরকার পুলিশ দিয়ে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করত। বর্তমান সরকারের নির্দেশে পুলিশ গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ের মিছিলে সরাসরি নির্বিচারে প্রাণঘাতী গুলি করে। রাতে নিরীহ নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে ক্রসফায়ারের নাটক সাজায়। পুলিশের মিথ্যা সাজানো মামলায় জেলার অন্তত ১ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’ এছাড়াও নতুন করে মামলা হওয়ার ভয়ে আরও সহস্রাধিক নেতা-কর্মী আত্মগোপনে রয়েছেন। এর পরও নেতা-কর্মীরা আন্দোলেনেই রয়েছেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরবেন না বলেও তিনি জানান।
৫ জানুয়ারি ২০ দলের কেন্দ্রঘোষিত কালো পতাকা মিছিল বরিশাল নগরীর সদর রোডে করতে দেয়নি পুলিশ। ওইদিন মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের নেতৃত্বে নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মতাসারে দায়সারা কালো পতাকা মিছিল করে দ্রুত সটকে পড়েন নেতা-কর্মীরা। পেট্রলবোমা হামলা মামলার আসামি করার পর সরোয়ারের আত্মগোপনের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার এড়াতে লাপাত্তা হয়ে যান মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া, উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির, সৈয়দ আকবর হোসেন, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ হাসান মামুনসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের নেতারা। এরপর মূলত বরিশালে ২০ দলের কর্মসূচির সমর্থনে মিছিল-সমাবেশের অগ্রভাগে দেখা যেত দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহিন, সহ-সভাপতি সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান, মজিবুর রহমান নান্টু এবং মহানগরীর সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক, মনিরুল আহসান মনির, মন্টু খান এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মহসিন মন্টুকে। সব শেষ ৫ মার্চ নগরীর নাজির মহল্লা থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সমর্থনে গণমিছিল বের করেন তারা। যদিও জেলখানা মোড়ে তাদের মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। কিন্তু ১২ মার্চ রাতে বরিশালের তিনটি আদালতে অগ্নিসংযোগের মামলায় চাঁন, শাহিনসহ সিনিয়র অর্ধশত নেতাকে আসামি করায় গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করেন তারাও। এর পর থেকে বরিশালে বিএনপির ব্যানারে কোনো মিছিল-সমাবেশ দেখা যায়নি। তবে বিএনপির মতো এত বড় একটি দল শেষ হয়ে গেছে- যারা বলছেন তারা সরকারকে খুশি করার জন্য এসব বলছেন বলে মনে করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, বিএনপি গণমানুষের দল। তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনাকারী বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। তার দাবি, পুলিশের গুলি ও গ্রেফতার এড়িয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা আন্দোলনেই আছেন। সরকার শেষ রক্ষাকবচ পুলিশের বন্দুক ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। এভাবে কোনো সরকার টিকে থাকতে পারেনি, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগও টিকে থাকতে পারবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে তিনি জানান। মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার আজাদ রহমান বলেন, আন্দোলনের নামে যারা নাশকতা ঘটায়, যাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে পুলিশ তাদের খুঁজছে। তাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই গ্রেফতার করা হবে। এ ক্ষেত্রে নিরীহ সাধারণ কোনো মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর