শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

আড়াইশ বছরের পুরনো আইনে চলছে জনস্বাস্থ্য

জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ৪৫টি আইন রয়েছে, দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে অধিকাংশই ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের আইন

২৫০ বছরের পুরনো আইন দিয়ে চলছে দেশের জনস্বাস্থ্য কার্যক্রম। দি ভ্যাকসিন্যাশন অ্যাক্ট ১৮৮০ ও দি এপিডেমিক ডিজিজ অ্যাক্ট ১৮৯৭ আইনে এখনো চলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষা আইন, চিকিৎসা শিক্ষা ও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার বিষয়ক আইনগুলোর অধিকাংশই গত শতাব্দীতে প্রণীত। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য  রক্ষার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৪৫টি আইন রয়েছে। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে অধিকাংশই ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের আইন।
জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জনস্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। অথচ আমাদের জনস্বাস্থ্য আইনটি উপনিবেশ যুগে প্রণীত একটি জরুরি ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ। যার নাম দি পাবলিক হেলথ (ইমারজেন্সি প্রভিশন) অর্ডিন্যান্স ১৯৪৪। এ আইনের বিধিতে এখনো লেখা রয়েছে, NOW, THEREFORE, in exercise of the powers conferred by section 72 of the Government of India Act, as set out in the Ninth Schedule to the Government of India Act, 1935, the Governor-General is pleased to make and promulgate the following Ordinance. এ ছাড়া সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, দেশে বিদ্যমান শত বছরের পুরনো আইনের মধ্যে রয়েছে, দি মেডিকেল ডিগ্রি অ্যাক্ট ১৯১৬,  দি মেডিকেল ডিপ্লোমা অ্যাক্ট ১৯৩৯,  দি ড্রাগ অ্যাক্ট ১৯৪০, দি এসেনশিয়াল সার্ভিস (সেকেন্ড) অর্ডিন্যান্স ১৯৫৮, দি ম্যালেরিয়া ইরাডিকশন বোর্ড অর্ডিন্যান্স ১৯৬১, দি মেডিকেল কলেজ (গভর্মেন্ট বডিস) অর্ডিন্যান্স ১৯৬১, দি এলোপ্যাথিক সিস্টেম (প্রিভেনশন অব মিসইউজ) অর্ডিন্যান্স ১৯৬২, দি মেডিকেল কাউন্সিল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ১৯৬৩, দি ড্রাগস (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ১৯৬৩, দি মেডিকেল সার্ভিস অব পাকিস্তান অর্ডার (রিপিল) অ্যাক্ট ১৯৬৩, দি মেডিকেল ডিপ্লোমা (রিপিল) অ্যাক্ট ১৯৬৬, দি ইউনানী, আয়ুর্বেদিক অ্যান্ড হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স ১৯৬৬ ইত্যাদি। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনগুলো হালনাগাদ করা হয়নি বলে চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে বিচারালয় পর্যন্ত জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে তার সাংবিধানিক অধিকার থেকে। অপচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, সরকারের নির্দেশ থাকার পরও মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে ফরেনসিক টেস্ট করানোর ক্ষেত্রে উদাসীনতা এবং কালক্ষেপণের ফলে ন্যায়বিচার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। এর নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আইনের ফাঁক-ফোকরের বিষয়টি। আইন হালনাগাদ না হওয়ায় পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন পেশার সঙ্গে জড়িতরা। ফলে বাড়ছে রোগীর প্রতি অবহেলা প্রদর্শন, অবৈধ ও নীতি গর্হিত (ম্যা প্র্যাকটিস) চিকিৎসা। এ বিষয়ে সরকার যে যথেষ্ট সচেতন তা বোঝা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার মান বজায় রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ইতিমধ্যে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। এর সঙ্গে শিগগিরই আরও ৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ চালু হবে। এখান থেকে যেন ‘রোগী-মারা’ কোনো চিকিৎসক বের না হন সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন ১১টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বাংলাদেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন নীতিমালা রয়েছে, যা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া চলছে। মেডিকেল শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া চিকিৎসক ও রোগীর স্বার্থ সংরক্ষণে সরকার নতুন আইন করবে বলেও তিনি জানান। এ ছাড়া সরকার চিকিৎসা খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ২০১১ সালে একটি স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করেছে। ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন আইনও হালনাগাদ করার কাজ চলছে।

সর্বশেষ খবর