রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

নির্বাচনী মাঠে খালেদা অংশ নেবেন প্রচারে

তিন সিটির নির্বাচনে বিজয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গ্রেফতার আতঙ্কে থাকা প্রার্থীরা নির্বাচনী যুদ্ধে মাঠে না থাকায় তাদের পক্ষে জনমত গড়তে গণসংযোগ করবেন তিনি। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয়ের মাধ্যমে বিগত তিন মাসের আন্দোলনের ‘ভুলগুলো’ কাটিয়ে উঠতে চান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। জয়-পরাজয় দুটোকেই আগামী দিনে আন্দোলনের ইস্যু করতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ কারণে পুরো নির্বাচন পরিস্থিতি দেখভাল করছেন খালেদা জিয়া নিজেই। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, তিন সিটিতে মেয়র প্রার্থীদের জেতানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে। এ জন্য আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের পাশাপাশি ২০-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদেরও মাঠে নামানো হচ্ছে। নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণেও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ জন্য কাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দুই সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থীদের পরিচিতি সভারও আয়োজন করা হচ্ছে। এতে খালেদা জিয়ার যোগদানের কথা রয়েছে।
‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’-এর স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সোমবার ঢাকার মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পরিচিতি সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের যোগদানের কথা রয়েছে। পহেলা বৈশাখের পর তিনি চট্টগ্রামেও যেতে পারেন। তবে চলমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই বেগম জিয়ার সফরসূচি চূড়ান্ত হবে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে আজ আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি। জানা যায়, সিটি নির্বাচন পর্যন্ত হরতাল কর্মসূচি না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। যে কোনো সময় অনির্দিষ্টকালের ডাকা অবরোধ কর্মসূচিও স্থগিত করা হতে পারে। এ নিয়ে বিএনপি জোটের নীতিনির্ধারকরা চিন্তাভাবনা করছেন। দেশের পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসায় নামকাওয়াস্তে থাকা অবরোধ কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসতে বিএনপির হাইকমান্ডের ওপর চাপ আসছে তৃণমূল থেকেও। সূত্রমতে, নির্বাচনী প্রচারণা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত বসার জন্য বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি বিএনপির দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সিটি নির্বাচনে কোথাও কোনো অনিয়ম হলে তৎক্ষণাৎ প্রেস ব্রিফিং করবেন। এতদিন দায়িত্বে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লা বুলুর পরিবর্তে তিনি এখন থেকে দলের পক্ষে বক্তৃতা-বিবৃতি দেবেন। বিএনপি নেতারা জানান, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হলে এবং জনগণ সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে ২০-দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত। তবে এ নিয়ে শঙ্কায় বিএনপি জোট। অনুকূল পরিবেশ ফিরে পেতে নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। অনুকূল পরিবেশ না পেলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বয়কটেরও চিন্তাভাবনা রয়েছে বিএনপিতে। ইতিমধ্যে প্রতীক পেলেও ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস প্রচারে নামতে পারেননি। তিনি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন পাননি। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। অবশ্য মির্জা আব্বাসের পক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তার সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস। তবে ঢাকা সিটি উত্তরে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালও দুই দিন ধরে প্রচারণায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সূত্র জানায়, টানা তিন মাসের আন্দোলনে মাঠের নেতা-কর্মীরা এখন অনেকটাই ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। বরাবরের মতো ঢাকা এবারও আন্দোলনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের। তা ছাড়া ঢাকার নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগই এখনো আত্মগোপনে। রাজধানীর কারণে সারা দেশে আন্দোলন কার্যকারিতা হারিয়েছে অনেকাংশে। এ অবস্থায় বিএনপি মনে করছে, সিটি নির্বাচন সামনে রেখে নেতা-কর্মীরা আবার সংগঠিত হতে পারবেন। এর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলেও চলে আসতে পারে। আপাতত আন্দোলন থেকে বের হওয়ার একটি পথ হিসেবে সিটি নির্বাচনকে দেখছেন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, সরকার ও নির্বাচন কমিশন এখনো সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি। এ অবস্থায় বিএনপি আরও কয়েক দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

সর্বশেষ খবর