রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম নির্বাচনে ফ্যাক্টর তিন লাখ ভোটার

চট্টগ্রাম নির্বাচনে ফ্যাক্টর তিন লাখ ভোটার

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর এখন তিন লাখ ভোট। নতুন ও সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের এ ভোটারদের হাতেই চট্টগ্রাম নগর ভবনের চাবি। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নগর পিতা কে হবেন, এ ভোটাররাই ব্যালটের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেবেন। তুলে দেবেন নগর ভবনের সেই কাঙ্ক্ষিত চাবি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সবকিছু ছাপিয়ে চসিক নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই। এ দুই অংশের ভোটব্যাংকের দখল যিনি নিতে পারবেন, তিনিই মেয়র নির্বাচিত হবেন। এমন এক পরিস্থিতিতে এই ভোটারদের কাছে টানতে তাই নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন হেভিওয়েট দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন ও মনজুর আলম। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে দলের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ব্যক্তিগতভাবে চট্টগ্রামের হিন্দুদের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে, বিপদ-আপদে সব সময় তাদের সঙ্গেই ছিলাম। যে কারণে তাদের প্রতি দাবিও আমার বেশি। আর নতুন ভোটাররাই আগামীতে নেতৃত্ব দেবেন। তাদের জন্যও খেলাধুলা থেকে শুরু করে নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।’ এদিকে বিএনপি সমর্থিত ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন’-এর প্রার্থী মনজুর আলম বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ তৈরি থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজেই তিনি আছেন। তিনি বলেন, ‘কখনো তাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখিনি। তারাও দেখেননি। তাদের কাছেও আমি বহুবার পরীক্ষা দিয়েছি। আমার বিশ্বাস, আমি তাদের পরীক্ষায়ও পাস করেছি।’ তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, ভোট এবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীর পক্ষেই যাবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবারের চসিক নির্বাচনে ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ১৭ হাজার সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট। এ ছাড়া নতুন ভোটার আছেন ৭৩ হাজার ৮৫০ জন। জানা যায়, ২০১০ সালের ১৭ জুনের চসিক নির্বাচনে টানা তিনবারের মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ৯৫ হাজার ৫২৮ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন মনজুর আলম। বিএনপি সমর্থিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মনজুর আলম পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৭৯ হাজার ১৪৫ ভোট, আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহিউদ্দিন চৌধুরী ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৭ ভোট। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৭ বছর ধরে মেয়র থাকা মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরাজয়ের পেছনে প্রধান কারণ ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট ও নতুন ভোটার। সে সময় মারাত্মক জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি পেতে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত তরুণ ভোটাররা পরিবর্তনের আশায় মনজুর আলমকে ভোট দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০০৫ সালের চসিক নির্বাচনে জয়লাভের পর মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়; যার প্রভাব পড়েছিল গত সিটি নির্বাচনে। তবে গতবার এমন হলেও এবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্রশ্নে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুসারীদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই বলে জানা গেছে। হিন্দুদের বিভিন্ন সংগঠনের নানা আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথি হয়েছেন তিনি।
এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনজুর আলমের সঙ্গেও হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো বিরোধ নেই। কাট্টলীতে তার নিজ বাড়ির উভয় পাশে (উত্তর ও দক্ষিণ কাট্টলী) হিন্দু সম্প্রদায়ের বিপুলসংখ্যক ভোটার রয়েছেন। ভোট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রার্থীর ইমেজের ওপরই নির্ভর করবে এই ৩ লাখ (হিন্দু সম্প্রদায়ের ২ লাখ ১৭ হাজার এবং তরুণ প্রজন্মের ৭৩ হাজার ৮৫০) ভোট। সৎ-আদর্শবান ও বিনয়ী যে কোনো প্রার্থীর ঘরে এই ভোটের বড় একটি অংশ ঝুঁকতে পারে বলে মনে করছেন তারা। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, ‘এবার আমরা এমন এক প্রার্থীকে ভোট দেব, যিনি সাম্প্রদায়িকতামুক্ত এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রতিনিধিত্ব করেন। নাগরিক হিসেবে সব সময় সনাতন সম্প্রদায়ের পাশে থাকেন এমন প্রার্থীকে স্বাভাবিকভাবে ভোটাররা বেছে নেবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যিনি ধরে রেখেছেন, মুক্তচিন্তা-মুক্ত সংস্কৃতিচর্চার যার নেতৃত্ব রয়েছে তার দিকেই ঝুঁকতে পারেন এই ভোটাররা। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের মেয়র পদটি একজন প্রগতিশীল যোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তির হাতে থাকুক এটাই আমরা চাই। তাহলেই একটি অসাম্প্রদায়িক-সুন্দর-পরিচ্ছন্ন-বাসযোগ্য নগরী গড়ে উঠবে।’

সর্বশেষ খবর