রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

এখনো আতঙ্কে প্রবাসীরা জাহাজ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ

ইয়েমেন থেকে ফিরেছেন আরও ১০ জন

ইয়েমেন থেকে বাংলাদেশিদের উদ্ধারে বিকল্প পদ্ধতি নিয়েছে ঢাকা। বিমান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ ও স্বল্প মাত্রার হওয়ায় সেখানে ভাড়া করা জাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে সহায়তা করছে। সাহায্য চাওয়া হয়েছে সৌদি আরবেরও। ইতিমধ্যেই ঢাকায় ফিরতে নিবন্ধিতদের এ জাহাজেই নিয়ে আসা হবে। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত পাল্টাতেও পারে। এ ছাড়া যারা ইতিমধ্যেই ভারতের জাহাজে আছে তাদের ভারতের কেরালা বন্দর থেকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হবে।
এদিকে গতকাল বিকালে ইয়েমেন থেকে ঢাকার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছেন আরও ১০ বাংলাদেশি। কিন্তু এখনো যেসব বাংলাদেশি ইয়েমেনে অবস্থান করছেন তারা রয়েছেন চরম আতঙ্কে।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশিদের উদ্ধারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘড়ি ধরে ২৪ ঘণ্টা তৎপর রয়েছে। আমরা সম্ভব সব চেষ্টাই করে যাচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হলো যুদ্ধ পরিস্থিতি। সেখানে এমনই পরিস্থিতি যে আইওএমের জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারছে না। ভারতের সহায়তায় ইতিমধ্যেই ইয়েমেন থেকে ৩৬০ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে জিবুতি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ২১ জন ঢাকা ফিরেছেন। বাকিরা ভারতের জাহাজে করে কেরালা বন্দরে গিয়ে পৌঁছবেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু ভারত এখন তাদের উদ্ধার তৎপরতার সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। এ কারণেই এখন আইওএমের সহায়তায় নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কুয়েতে থাকা দূতাবাসের মাধ্যমে ফিরতে আগ্রহী ৫০০ বাংলাদেশি নাম নিবন্ধন করেছেন। তাদের অতিসত্বর জাহাজে করে ফিরিয়ে আনা হবে।
সচিব জানান, বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার জন্য কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে জিবুতিতে একটি প্রত্যাবাসন নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়া সমন্বয়ের জন্য কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) এস এম মাহবুবুল আলমকে এপ্রিলের শুরুতে জিবুতি পাঠানো হয়। পরে তার সঙ্গে তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা যোগ দেন। তারা ইয়েমেনে আটকেপড়াদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে ইয়েমেনে বাংলাদেশিদের উদ্ধারের জন্য উড়োজাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ইয়েমেনের আকাশপথ সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রণে থাকায় সৌদি সরকারের কাছে অনুমোদনও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতি কোনো নিয়ন্ত্রণে না থাকায় সেই পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে এসেছে সরকার।
আতঙ্কে ইয়েমেন প্রবাসীরা : ইয়েমেন থেকে গতকাল কলিমুল্লাহ নামের এক বাংলাদেশি টেলিফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার কাউন্সিলর এস এম মাহবুবুল আলম ফোনে বাংলাদেশিদের হুদাইদাহ বিমানবন্দরে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। সে হিসেবে প্রায় সাড়ে ৩০০ বাংলাদেশি ওই বন্দরে হাজির হন। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোনো জাহাজ পাওয়া যায়নি। পরে সমুদ্র বন্দরের কাছেই হাদিকা আল আসাস নামে এক পার্কে অবস্থান নেন তারা। এ সময় ওই কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি জানান, তাদের সঙ্গে যদি কোনো ভারতীয় থাকে তবেই তারা জাহাজে করে প্রথমে জিবুতি এবং পরে দেশে ফিরতে পারবেন। ভারতীয় না থাকলে তাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
এ খবরের পর কিছু বাংলাদেশি ইয়েমেনের চলমান অস্থিতিশীলতার মধ্যেই নিজেদের বাসস্থানে ফিরে যান। কিন্তু অধিকাংশের সঙ্গে টাকা-পয়সা এবং খাবার না থাকায় দিশাহারা হয়ে ওই পার্কেই দিন কাটাচ্ছেন। কলিমুল্লাহ জানান, তারা এই মুহূর্তে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তাদের বেঁচে থাকাটাই বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে কাটছে দিন।  
ফিরেছেন আরও ১০ জন : ইয়েমেন থেকে জিবুতি হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা ফিরে এসেছেন আরও ১০ প্রবাসী বাংলাদেশি। ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইন্সের এফজেড-৫৮৫ ফ্লাইটে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা ঢাকা এসে পৌঁছেন। এর আগে গত শুক্রবার প্রথম ধাপে আট নারী ও শিশুসহ ১১ জন দেশে ফিরেন।

সর্বশেষ খবর