রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

মালয়েশিয়া থেকে ফিরতে চান বাংলাদেশি শ্রমিকরা

মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিরাট অংশ এখন স্বদেশ ফিরতে চাইছেন। কাজের বৈধতা না পেয়ে তারা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, এ জন্য মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে ধরনা দিয়েও এসব শ্রমিক সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
শ্রমিকদের অভিযোগ, দৈনিক ১৩-১৪ ঘণ্টা কাজ করেও তারা দু-মুঠো খাবার জোগাড় করতে পারছেন না। কাজ করতে গিয়ে কাজের যন্ত্রপাতিও নিজেদেরকে কিনতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে কাজ করছেন। ন্যায্য বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধার কিছুই মিলছে না। জানা গেছে, বৈধভাবে কাজ করতে গেলেও মালয়েশীয় সরকার এসব শ্রমিকদের বৈধতা না দেওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। দুর্গম বনাঞ্চল পাহাং জেলার লাডাং শহরের কসমায় কর্মরত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে মোস্তফা কামাল (৩৫) কষ্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে জানান, এখানে যে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হচ্ছে তা ভয়াবহ। প্রতিবাদ করলেই গালাগালি করে পরিধেয় কাপড় কেড়ে নেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় খাবার। কথা বললেই হত্যা করে জঙ্গলে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘বাধ্য হয়ে আমরা ১৩-১৪ ঘণ্টা একটানা কাজ করছি। শুধু বেঁচে থাকার জন্য মুখ বুজে সহ্য করছি সব অন্যায়, অত্যাচার-নির্যাতন। আমাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমরা আর এখানে থাকতে চাই না।’ চট্টগ্রামের মিরেরসরাই উপজেলার বড় তাকিয়া ইউনিয়নের আবদুর রশিদের ছেলে কামরুল ইসলাম (৩০) বলেন, ‘এখানে শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারিভাবে আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কোনোটিই পূরণ করা হচ্ছে না। ঠিকমতো বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে কাজ করানো হচ্ছে ১৩-১৪ ঘণ্টা। পরিশ্রম করানো হচ্ছে তিন গুণ। অথচ ঠিকমতো বেতন পাচ্ছি না। নিয়ম অনুযায়ী, আমাদের প্রতিমাসে ৯৫০ মালয়েশিয়ান রিংগিত দেওয়ার কথা কিন্তু ৫ মাসে আমরা বেতন পেয়েছি মাত্র ১৫০০ রিংগিত। যা দিয়ে আমাদের কোনো রকমে খাওয়া জুটছে।’ ঢাকার সাভার উপজেলার আমিন বাজার ইউনিয়নের বড়দেশী গ্রামের হেলাল খানের ছেলে জুলফিকার আলী (২৫) বলেন, ‘যে আশা নিয়ে আমরা দেশ থেকে এদেশে এসেছি, সে আশা পূরণ হয়নি। এখানে এসে দেখি সবকিছুই ভিন্ন। আমাদের পাসপোর্ট ও কাগজপত্র এখানকার কোম্পানির লোকজন নিয়ে নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বেশি কিছু চাই না। সরকার আমাদের যা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পেলেই আমরা খুশি হতাম। আমাদের যদি ভালো কাজ না দেওয়া হয়, তাহলে যেন দেশে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’ একই এলাকার আরেক শ্রমিক আবদুল মজিদ জানান, জি-টু-জি লটারির মাধ্যমে গত বছরের ১০ জানুয়ারি তারা তিনজন কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। বাংলাদেশের শ্রম অধিদফতর এ সব শ্রমিকদের তুলে দেয় কপারাসিং নামে একটি কোম্পানির কাছে। ওই কোম্পানির অধীনে প্রায় ৩৯ জন বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন পাহাং এলাকায়। তাদের অবস্থা ভয়াবহ।
তিনি বলেন, ‘কপারাসিং কোম্পানির ভারতীয় মালিক বলেছে, তারা আমাদের ১৫০০ রিংগিত দাম দিয়ে কিনেছে। তাই তারা যেমন খুশি তেমন কাজ করাবে। তর্ক করলে হত্যা করে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হবে।’ ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারিভাবে যে কাজ দেওয়ার কথা ছিল তা দেওয়া হয়নি। তার বদলে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক দৈনিক ‘কাজ নাই মজুরি নাই’ ভিত্তিতে কাজ করতে হচ্ছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দিনে ৮ ঘণ্টা (১ ঘণ্টা বিশ্রামসহ) কাজ করানোর কথা থাকলেও করানো হচ্ছে ১৩-১৪ ঘণ্টা। পরিশ্রম করানো হচ্ছে তিন গুণ। অথচ ন্যায্য বেতন দেওয়া হচ্ছে না। যে টাকা দেওয়া হচ্ছে তা খাবার খেতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবহারের জন্য ট্রলি, থাকার ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিনামূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও কিছুই মিলছে না।

সর্বশেষ খবর