রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

আলোকিত ঢাকা গড়ার প্রত্যয়ে আনিসুল, বস্তিতে ঘুরছেন তাবিথ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক। ইশতেহারে রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন-সবুজ-নিরাপদ-মানবিক-আলোকিত ও ‘স্মার্ট’ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন এই প্রার্থী। এদিকে নির্বাচনী প্রচারে বস্তিতে ঘুরছেন ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। গতকাল রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। এ সময় তার নির্বাচনী প্রতীক ‘বাস’ সম্বলিত লিফলেটও ভোটারদের কাছে বিতরণ করেন তিনি।
আলোকিত ঢাকা গড়ার প্রত্যয় : পরিচ্ছন্ন-সবুজ-আলোকিত-স্মার্ট-মানবিক ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে গতকাল রাজধানীর নিকুঞ্জে লোটাস-কামাল টাওয়ারে নির্বাচনী কার্যালয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এ সভাপতি আনিসুল হক। তিনি বলেন, আমি নগর পিতা নয়, নাগরিকদের বন্ধু হয়ে থাকতে চাই। এ ছাড়া ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী করতে ‘এবার সমাধানযাত্রা’ শীর্ষক ইশতেহারে ছয়টি মূল বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। এগুলো হলো- পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব ঢাকা; নিরাপদ-স্বাস্থ্যকর ঢাকা; ‘সচল’ ঢাকা; ‘মানবিক উন্নয়নের’ ঢাকা; ‘স্মার্ট ও ডিজিটাল’ ঢাকা এবং অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত ঢাকা। এ ছাড়া টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে সিটি নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে থাকা আনিসুল সিটি করপোরেশনের কাজে সমন্বয়হীনতার জন্য দক্ষ সমন্বয়কের অভাবকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, আইনে ২৮ ধরনের কাজ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলেও মেয়রের আইনি কর্তৃত্বের অভাব আছে। অন্যদিকে নাগরিকসেবা নিশ্চিত করতে মেয়রকে সরকারের ৫৬টি সংস্থার ওপর নির্ভর করতে হয়। সিটি করপোরেশন এবং এসব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল সর্বোচ্চ নাগরিকসেবা দেওয়া সম্ভব। দক্ষ সমন্বয়কের অভাব আছে এসব সংস্থাগুলোর মধ্যে। আনিসুল হক বলেন, ঢাকার নাগরিকরা আমাকে নির্বাচিত করলে সংস্থাগুলোর মধ্যে সুষম সমন্বয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ নাগরিকসেবা নিশ্চিত করতে পারব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। ইশতেহার ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়ক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমান, বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মান্নান কচি, এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক, সংসদ সদস্য তারানা হালিমসহ এফবিসিসিআই, বিজিএমইএর সাবেক ও বর্তমান নেতারা। এক ইশতেহারে পরিচ্ছন্ন-সবুজ-আলোকিত-স্মার্ট-মানবিক ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন আনিসুল হক। শুরুতে তিনি ইশতেহারের কিছু অংশ পাঠ করে শোনান। এরপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে নগরীর চিহ্নিত বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধানে পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যেই ঢাকার সমস্যা সমাধানে বহু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বহু নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরপরও নগরীতে নানা সমস্যা আছে। যার সমাধানে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি আমি। তিনি জানান, একটি ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসের নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। যার মাধ্যমে ঢাকার নাগরিকরা বিভিন্ন সমস্যা সরাসরি মেয়রকে জানাতে পারবেন। প্রতিকার চাইতে পারবেন। তিনি বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে আমার চিরকালের শক্রতা। এ বিষয়ে আমি কোনো আপস করব না। অতীতে করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনের সব সেবা পর্যায়ক্রমে দুর্নীতিমুক্ত করব। নাগরিকদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটিকে পেশিশক্তি, মাস্তানি, অনৈতিক প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত রাখতে চেষ্টা করব। তিনি বলেন, ‘আমি নগর পিতা নয়, নাগরিকদের বন্ধু হয়ে থাকতে চাই। নগর পিতা শব্দটির মধ্যেই এক ধরনের নিঃসঙ্গ, কর্তৃত্ববাদী ইমেজ ফুটে ওঠে। মেয়র বলতে আমি বুঝি, মেয়র হচ্ছেন নাগরিকদের সেই প্রতিনিধি, যিনি নাগরিকদের হয়ে শহরে সাম্য, কল্যাণ আর ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে চান’। ইশতেহার ঘোষণার পর সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন আনিসুল হক। পাঁচ বছরে এতসব সমস্যার সমাধান সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি উদ্যোগী। মনোভাব ইতিবাচক। পাঁচ বছর অনেক সময়। এই সময়ের মধ্যে অনেক কিছু করা সম্ভব যদি আমরা আন্তরিক হই। সিটি গভর্নমেন্ট ছাড়া তার সিটির কর্মসূচি বাস্তবায়নযোগ্য কিনা প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, এই প্রশ্নের জবাব এখনই দেওয়া কঠিন। তবে সরকারকে ছাড়া তো চলবে না। সরকার অর্থ বরাদ্দ দিলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, না দিলে হয় না। ফলে সরকারি প্রভাব থাকা খুবই স্বাভাবিক। বরং প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে যদি বেশি বেশি নাগরিকসেবা দেওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কি?
কড়াইল বস্তিতে তাবিথ আউয়াল : রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এ সময় তার নির্বাচনী প্রতীক ‘বাস’ সম্বলিত লিফলেটও ভোটারদের কাছে বিতরণ করা হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন ঠিকমতো কাজ করলে আমি জয়ী হব।’ বস্তি থেকে বের হয়ে তিনি রাজধানীর বনানী ও গুলশান এলাকায়ও প্রচার চালান। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কড়াইল বস্তি এলাকায় ভোটের প্রচার অভিযান চালান তাবিথ আউয়াল। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ফারুক হোসেন ভূঁইয়াসহ যুবদল ও ছাত্রদলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী। তাবিথ আউয়াল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা  যে লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন, আমি নির্বাচিত হলে সে লড়াইকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি তো ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে পরিচিত। রাজনীতিতে নতুন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি। রাজনীতির মাঠেই বাকি জীবন কাটাতে চাই।’ অনেক পরে এসে অল্প সময়ের মধ্যে কতটুকু প্রচার চালাতে পারবেন জানতে চাইলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, আমি যে সময় পেয়েছি তার মধ্যে সব  ভোটারের কাছে পৌঁছাতে পারব। আশা করি জয়লাভ করব। প্রার্থী জটিলতায় বিএনপি থেকে দেরিতে সিদ্ধান্ত আসার পর শুক্রবার নির্বাচনী প্রচারে নামেন তাবিথ আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের প্রচারের সুযোগ। কিন্তু তার বাবা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর জন্য এত দিন অপেক্ষায় ছিলেন তাবিথ। নির্বাচন কমিশনে মিন্টুর মনোনয়ন বাতিলের পর উচ্চ আদালতে গিয়েও মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফিরে পাননি তিনি। মিন্টুকে না পেয়ে বৃহস্পতিবার তার ছেলে তাবিথকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানায় বিএনপি। নির্বাচনে তিনি বাস প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।

সর্বশেষ খবর