রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

হাজার বছরের পুরনো স্থাপনা

হাজার বছরের পুরনো স্থাপনা

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইবাড়ী মঠেরচালা এলাকায় পাল আমলের প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হয়েছে। এক হাজার বছর আগে এখানে এক পরিকল্পিত জনপদ ছিল। চলমান প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণায় এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত স্থাপন ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গবেষকরা এমনটাই ধারণা করছেন। তবে ধ্বংসাবশেষটি মন্দির কি না, সে সম্পর্ক তারা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক বিভাগের উদ্যোগে সেখানে খননে মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে ইটের তৈরি নকশা, দেয়ালের বাইরে হাতে কাটা ইটের জালি নকশা ও বিভিন্ন স্থাপনা। শুক্রবার দুপুরে প্রাচীন এ স্থাপনার পাশে দাঁড়িয়েই এ আবিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন গাজীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি। এ সময় তিনি বলেন, এ প্রত্নস্থানে এ পর্যন্ত যে কটি স্থাপনা ও স্থাপনাংশ আবিষ্কৃত হয়েছে, তা দেশের ইতিহাসে এক নতুন সংযোজন। সরকারিভাবে এগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ের উদ্যোগে শুক্রবার বড়ইবাড়ী মঠেরচালা এলাকায় প্রত্নস্থলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, স্থানীয় জনসাধারণের সম্পৃক্ততা বিষয়ে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। দুই বছর ধরে এ এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণার কাজ করছে ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব শিরিন আখতারের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন সিমিন হোসেন রিমি। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান, কালিয়াকৈর উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষকরা। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ও চলতি বছর খননে মাটির নিচ থেকে যেসব স্থাপনা বেরিয়ে আসছে, তাতে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত জনপদের চিত্রই গবেষকদের সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। যেখানে ধর্মশাস্ত্রের পাশাপাশি জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা করা হতো। এটি প্রায় এক হাজার বছর আগের পাল আমলের ধ্বংসাবশেষ। এখানে প্রাচীন স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষসহ বেষ্টনী অভ্যন্তরীণ দেয়াল, দরজা, কুলঙ্গি, কর্নার টারেট, নালা, প্রচুর নকশাকৃত ইট, অলঙ্কৃত ইটের টুকরো, মৃৎপাত্রের টুকরা, পাথরের বেদি, পিলাস্টার, বর্গাকার মন্দির, শিবলিঙ্গ উন্মোচিত হয়েছে। এ ছাড়া মুসলিম আমলের ধাতব মুদ্রা, অষ্টভুজাকৃতির কর্নার টারেট, পোড়া মাটির বল, পোড়া মাটির প্রদীপস্ট্যান্ড, গ্লেইজডওয়্যার, নব্য যুগের হাতিয়ার, ফুটন্ত পদ্মফুল, আঙ্গুর ফল, বটপাতার নকশাসহ বিভিন্ন নিদর্শনও দেখা গেছে। চলমান প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণায় এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত স্থাপনা ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পাল আমলের ধর্মীয় কোনো একটি প্রার্থনার স্থানের ধ্বংসাবশেষ বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। তবে স্থাপনাটি মন্দির হিসেবে ধারণা করা হলেও এটি মন্দির কি না, তা তারা এখনো নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তরে বড়ইবাড়ী মঠেরচালা গ্রামে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক বিভাগের উদ্যোগে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে। ড. আতাউর রহমান বলেন, খননে মাটির তলা থেকে যেসব স্থাপনা বেরিয়ে আসছে, তাতে এটি পাল আমলের স্থাপনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এটি কোন ধর্মের নিদর্শন, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, আরও গবেষণার পর বলা যাবে।

সর্বশেষ খবর