রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

বিদ্যুৎ সংকটে বিপদে নওগাঁর কৃষক

বিদ্যুৎ সংকটে বিপদে নওগাঁর কৃষক

বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপের মাধ্যমে নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিল উথরাইলের ১০ হাজার হেক্টর যা স্থানীয় হিসেবে ৭৫ হাজার বিঘা জমিতে এক ফসলের পরিবর্তে তিন ফসল আবাদ করা যায়। এতে শুধু বোরো মৌসুমে ওই বিলে প্রায় ৪ লাখ মণ অতিরিক্ত ধান উৎপাদন করা সম্ভব। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ সরিষা উৎপাদনেরও সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে সেচযন্ত্র চালু করতে না পারায় বিলে এক ফসল আবাদে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। জানা গেছে, জেলার মান্দা উপজেলার ভারসো ইউনিয়নের ছয়টি বিল নিয়ে বিল উথরাইল। এগুলো হলো- বিল উথরাইল, বিল মহানগর, বিল কালিসভা, বিল সিদ্ধেশ্বরী, বিল মানকী ও বিল রাজেন্দ্রবাটি। এখানে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি, যা স্থানীয় হিসাবে ৭৫ হাজার বিঘা। এ বিলের ওপর আশপাশের ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকা জড়িত। কিন্তু বিলে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র কিংবা গভীর নলকূপ না থাকায় পুরনো দোন পদ্ধতির মাধ্যমে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করা হয়। এ পদ্ধতিতে চার-পাঁচ ধাপে বিল থেকে পানি এনে নিজ নিজ জমিতে সেচ দিতে হয়, যা খুবই দুঃসাধ্য ও কষ্টকর। এতে উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি প্রতি বছর অনেক জমি অনাবাদি থাকে। এতে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। স্থানীয় কৃষক আবদুল মান্নান, আবদুস সালাম, ইব্রাহিম হোসেন ও ইমরান আলী জানান, দোন পদ্ধতিতে যতক্ষণ বিলের পানি থাকে, ততক্ষণ নালা কেটে চার-পাঁচ ধাপে পানি এনে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদন করতে কেবল সেচ খরচ পড়ে সাড়ে চার হাজার টাকা। বীজ, জমি তৈরি, পরিচর্যা, মাড়াই খরচ বাদ দিলে কৃষকের কোনো লাভ থাকে না। এত কিছুর পরও প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদন হয় ১৮-২০ মণ। অথচ গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিতে পারলে প্রতি বিঘায় সেচ বাবদ খরচ হবে ৫০০-৬০০ টাকা। পাশাপাশি ধান উৎপাদন হবে ২৫-২৭ মণ। বিলের পুরো জমি চাষের আওতায় আনা হলে বছরে ১৫ লাখ মণ অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে। অন্যদিকে রবি মৌসুমে এসব জমিতে সরিষা চাষ করে কৃষকরা বাড়তি টাকা উপার্জন করতে পারেন। এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ২২ হাজার  হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক জমিই বিল উথরাইলের। কাজেই ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে জেলার মান্দা উপজেলার বিশেষ অবদান রয়েছে। বৈদ্যুতিক মোটর কিংবা গভীর নলকূপের মাধ্যমে এ বিলের জমি সেচ সুবিধায় আনা গেলে ফসল উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এতে উৎপাদন খরচও অনেক কমে যাবে। লাভবান হবেন কৃষক। একই সঙ্গে রবি মৌসুমে বিলে প্রচুর পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হবে। এদিকে বিল উথরাইলে সেচ সুবিধার জন্য গভীর নলকূপ স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত ২৯ মার্চ পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সুপারিশ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর