বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

মায়াকে নিয়ে এখনো বিতর্ক

ঢাকার ১২ এমপিকে নিয়ে আলোচনা

মায়াকে নিয়ে এখনো বিতর্ক

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখনো মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে ঘিরেই সমস্যা। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কর্মীরা যখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঘরে ঘরে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত তখন মায়া এক ধরনের রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছেন। তিনি এখনো সক্রিয় নন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে। মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যেই একটি নিজস্ব কর্মীবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেন মায়া। এ বাহিনীর কর্মীদের কোনো তৎপরতা নেই সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায়। মায়ার এ রহস্যজনক ভূমিকার কারণে ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র পদে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের ভরাডুবির আশঙ্কা আছে খোদ দলের মধ্যেই। ইতিমধ্যে এ শঙ্কার কথা কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিতও করেছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই বলছেন, সিটি নির্বাচনে এবার অগি্নপরীক্ষায় ঢাকার ১২ এমপি ও মহানগর নেতারা। এ অগি্নপরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই পাবেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিটি নির্বাচন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও দলীয় এমপিদের জন্য একটি অগি্নপরীক্ষা। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে মিলবে পুরস্কার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে লড়ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে লড়ছেন ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক। পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না পাওয়ায় নাখোশ মায়া। সাঈদ খোকন আর আনিসুল হক দলীয় সমর্থন পাওয়ায় মায়া নগর রাজনীতিতে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। মায়ার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তারা মেয়র নির্বাচিত হলে রাজধানীতে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মায়ার একচ্ছত্র দাপট আর থাকবে না, সেই রাজধানীর রাজনৈতিক প্রভাববলয় আর ক্ষমতা কাঠামোতে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়বেন মায়া। এজন্যই নির্বাচনী আচরণবিধির দোহাই দিয়ে তিনি নির্বাচনসংক্রান্ত সাংগঠনিক তৎপরতা থেকে দূরে রয়েছেন। অন্যদিকে নিজ গ্রুপের নেতা-কর্মীদেরও নিষ্ক্রিয় থাকতে বলেছেন।

দলীয় সূত্রমতে, সিটি নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পর থেকেই সাঈদ খোকনের পক্ষে যায় এমন দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ করেন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর অনির্ধারিত আলোচনায় সাঈদ খোকনের পক্ষে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সিটি নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেও সঠিকভাবে কাজ করছেন না নেতা-কর্মীরা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে মাঠে নামলেও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা মন্ত্রী হওয়ায় মাঠে নামতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা ও স্থানীয় এমপি, মহানগরের শীর্ষ নেতাদের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। ঢাকায় নির্বাচনী ফল ঘরে তুলতে দলের হাইকমান্ড থেকে ঢাকা মহানগরের ১২ জন দলীয় এমপি, মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সিটি নির্বাচনে নিজ নিজ এলাকায় অবশ্যই নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে হবে স্থানীয় এমপি ও মহানগর নেতাদের। ঢাকার দুই সিটিতে ১৫টি সংসদীয় আসন পড়লেও আওয়ামী লীগের এমপি রয়েছেন ১২ জন। এদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকার কিছু অংশ দক্ষিণ সিটিতে পড়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এলাকার মধ্যে আরও দলীয় এমপি রয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী, হাবিবুর রহমান মোল্লা, কামাল আহমেদ মজুমদার, আসলামুল হক, ইলিয়াস উদ্দীন মোল্লাহ্, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, এ কে এম রহমতউল্লাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বতন্ত্র এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম। হাজী সেলিম স্বতন্ত্র এমপি হলেও তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচিত না হলেও সংরক্ষিত আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সানজিদা খানমও রয়েছেন এ তালিকায়। নির্বাচনী বিধিনিষেধ থাকায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সরাসরি মাঠে নামতে পারছেন না। দক্ষিণ সিটির প্রার্থীর পক্ষে ভূমিকা রাখা নিয়ে প্রথম দিকে অ্যাডভোকেট কামরুলের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে দু-তিন জন এমপি সক্রিয় ভূমিকা রাখলেও অন্য এমপিদের অনেকটা গাছাড়া ভাব। অভিযোগ রয়েছে, হাবিবুর রহমান মোল্লা, কামাল আহমেদ মজুমদারও সক্রিয় নন মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায়। বরং তারা আদাজল খেয়ে নেমেছেন নিজস্ব বলয়ের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের পক্ষে। দলের মহানগর, থানা ও ওয়ার্ডের শীর্ষ নেতাদেরও একই অবস্থা। তারাও মেয়র প্রার্থীর চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়েই ব্যস্ত।

 

দলীয় সূত্রমতে, সিটি নির্বাচনে দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রচার-প্রচারণায় কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দলীয় এমপিদের প্রচারণায় নামতে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এ নির্বাচনে এমপিদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে হবে। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন তাদের আগামীতে দলীয় কোনো পদ-পদবি দেওয়া হবে না। জানা গেছে, অনেক থানা ও ওয়ার্ডের নেতা কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন না পেয়ে প্রতিশোধ হিসেবে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন না। কোনো কোনো ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীদের বিপক্ষেও কাজ করছেন। আর যারা বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের তারা ম্যানেজ করছেন। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত দলের হাইকমান্ড।

 

সর্বশেষ খবর