বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

**********

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীকেও রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল অর্থাৎ ভোটের দুই দিন আগে, ভোটের দিন ও পরের দিন 'রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং' হিসেবে মাঠে থাকবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ গতকাল কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি ভালো হলেও জনমনে যেন ভীতি না থাকে সে জন্য সেনাবাহিনীকেও আমরা ব্যবহার করব। তিনি জানান, অন্যান্য বাহিনীর মতো সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল চার দিন তিন সিটি করপোরেশন এলাকায় 'রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং' ফোর্স হিসেবে থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা চাইলে তারা সাড়া দেবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই বলে এলেও বিএনপি ও সমমনারা শুরু থেকেই ভোটের নিরাপত্তায় সেনা চেয়ে আসছিল। তবে ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোট সামনে রেখে সোমবারও দ্বিধায় ছিল নির্বাচন কমিশন। এর আগে কখনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করেনি নির্বাচন কমিশন। চার বছর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। তখন ইসির পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সেনা মোতায়েন সম্ভব হয়নি। এবার নির্বাচনের আগে গতকাল ইন্দোনেশিয়া সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ফিরবেন ভোটের পাঁচ দিন আগে ২৩ এপ্রিল।

৩ ব্যাটালিয়ন সেনা চেয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ইসির চিঠি : চিঠিতে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার ডাকলেই তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বললেন, প্রয়োজন ছিল না। তবু আতঙ্কিত সময়ে ভোটারদের মানসিক স্বস্তির জন্য সেনা সহায়তার জন্যে বলা হয়েছে। তিন সিটি নির্বাচনে তিন ব্যাটালিয়ন সেনা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বিকালে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠান ইসির সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব মো. সামসুল আলম। ডাকযোগে ও বিশেষ বাহক মারফত এ সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের প্রতিটি এলাকার জন্যে এক ব্যাটালিয়ন করে তিন ব্যাটালিয়ন সেনাবাহিনীর সদস্য ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মোতায়েনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেনা নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশন চিঠিতে বলেছে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। রিটার্নিং অফিসার ডাকলেই তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন।

প্রয়োজন ছিল না, তবু দিলাম মানসিক স্বস্তির জন্যে : বিকালে ইসির মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানান, নির্বাচনী এলাকায় পরিবেশ অত্যন্ত সুষ্ঠু রয়েছে। দেশের পরিস্থিতিও ভালো বিরাজ করছে। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও পর্যাপ্ত রয়েছে ভোটের জন্য। 'আমরা যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশি লোকবল দেওয়ার কথাও বলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা।' তিনি জানান, গত ছয়টি সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী ডাকা হয়নি। একই পরিস্থিতি এখনো বিদ্যমান। এবার সেনা মোতায়েনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কাজী রকিব বলেন, 'তিন সিটিতেও সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন ছিল না।

বিচারিক ক্ষমতা চাই : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আসন্ন ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া না হলে সেনা মোতায়েনের উদ্দেশ্য সফল হবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সামনে গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

 

মওদুদ আহমদ বলেন, 'সিইসির সঙ্গে দেখা করে বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেসব সেনা মোতায়েন করা হবে তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রদানের দাবি করেছি। তা না হলে সেনা মোতায়েন সফল হবে না। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আগামী সাত দিন বিএনপি সমর্থিত কোনো প্রার্থী, নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণকারী দলীয় নেতা-কর্মীদের আটক বা গ্রেফতার করে হয়রানি না করার দাবি জানিয়েছি। একই সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটির আওতাভুক্ত যেসব থানায় সরকারদলীয় মনোভাবসম্পন্ন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রয়েছেন তাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সিইসির কাছে দাবি জানিয়েছি বলেন সাবেক আইনমন্ত্রী।

 

সর্বশেষ খবর