মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
খোলা আকাশের নিচে লাখো মানুষ, খাবার-ওষুধ সংকট

নেপালে মৃত ৪ হাজার ছাড়িয়েছে

নেপালে মৃত ৪ হাজার ছাড়িয়েছে

ভূমিকম্পের ভয়াবহতায় খোলা আকাশের নিচেই এখন নেপালিদের ঠিকানা -এএফপি

দিনের আলোয় যতটুকু দেখা যায় তাতেই চলছে নেপালে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত চার হাজারের বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এদিকে দেশটিতে সন্ধ্যা হলেই নামছে অন্ধকার। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দেশজুড়ে কোথাও বিদ্যুৎ নেই। আর সব স্থাপত্যেই এখন ভাঙাচোরা বা ধসে পড়া অবস্থা। শহরের যেখানে যেটুকু ফাঁকা রয়েছে সেখানে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী আস্তানা। তাঁবু গেড়ে চলছে বসবাস। এই তাঁবুতেই থাকতে হচ্ছে দেশটির প্রেসিডেন্ট রামবরন ইয়াদেবসহ দেশটির সব কর্মকর্তাকে। গতকালও দেশটিতে কয়েক দফায় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। চলছে থেমে থেমে বৃষ্টিও। হিমালয়ের কোলে ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষের এই  দেশে রাজধানীর বাইরে প্রত্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ  সে চিত্র এখনো স্পষ্ট নয়। প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ। আহতদের সেবা দেওয়ার জন্য কোনো হাসপাতালেই জায়গা নেই। রয়টার্স জানিয়েছে, ন্যূনতম চিকিৎসা পরিসেবা দিতে মেডিকেল কলেজ চত্বরে অস্থায়ী তাঁবুর ভিতরেই খোলা হয়েছে অস্ত্রোপচার কক্ষ।  
নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তা লক্ষ্মীপ্রসাদের কথায়, ‘কোথাও বিদ্যুৎ নেই। পানি নেই। এই দুই পরিসেবা জরুরি ভিত্তিতে স্বাভাবিক করাই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। তবে খাদ্যের জোগান ঠিক রাখাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দোকানিরা দোকান খুলতে পারছেন না! ফলে খাবারের সংকট দেখা দিতে পারে।’ এদিকে উদ্ধারকর্মীরা রবিবারও রাতভর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে হতাহতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছেন। নেপাল সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে পৌঁছাতে শুরু করেছে ত্রাণসহায়তা। এদিকে রাস্তাঘাট ফাটল ও দেবে যাওয়ায় জরুরি ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। নেপালের কাঠমান্ডু এবং পোখরা নগরীর মাঝে শনিবার দুপুরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকাও কেঁপে উঠে। এরপর  রবিবার পর্যন্ত তিন দফায় আরও তিনটি মাঝারি মাত্রার পরাঘাত অনুভূত হয়, যার মধ্যে একটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭। গতকালও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শনিবারের ভূমিকম্পে ভবন ধস, দেয়াল চাপা পড়ে এবং হুড়োহুড়িতে ভারত, চীন, তিব্বত ও বাংলাদেশে আরও কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, ভূমিকম্পের চতুর্থ দিন আজও উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে। বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ দল এ অভিযানে শামিল হয়েছে।
নেপালে মৃত বা নিখোঁজ বিদেশিদের সংখ্যা : পর্যটকবান্ধব নেপালে ভূমিকম্পের শিকার হয়েছেন অনেক বিদেশি। বিবিসি এক প্রতিবেদনে নেপালে মৃত বা নিখোঁজ বিদেশিদের সংখ্যা উল্লেখ করেছে গতকাল। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ৫৪৯ নিবন্ধিত হয়ে নেপালে অবস্থান করছিলেন। তাদের মধ্যে ২০০ জনের  খোঁজ মিলেছে যারা নিরাপদে রয়েছেন। বাকিদের খোঁজ  মেলেনি। বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবল দলের সদস্যসহ ৫০ বাংলাদেশি নাগরিককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে নেপালে কোনো বাংলাদেশির হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। চীনের চার নাগরিক মারা গেছেন। কলম্বিয়ার সাত নাগরিক নিখোঁজ রয়েছেন। ফ্রান্সের এক হাজার ৯৮ ফরাসি নেপালে নিরাপদে আছেন বলে জানা গেছে।
সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা : ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকারী দল পৌঁছেছে নেপালে। এর মধ্যে-
বাংলাদেশ : বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর একটি দল ত্রাণ ও ওষুধ নিয়ে রবিবারই নেপালে পৌঁছেছে। সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরাও রয়েছেন এই দলে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের সাহায্য পৌঁছানোর জন্য সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ভারত : ভারত থেকে ফিল্ড হাসপাতাল (খোলা জায়গায় আপদকালীন হাসপাতাল), ওষুধ, কম্বল, প্রায় ৫০ টন পানি, ২২ টন খাবার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে ১৩টি সেনা এয়ার ক্র্যাফট পাঠানো হয়েছে। এর পাশাপাশি জাতীয় বিপর্যয়  মোকাবিলায় বাহিনীর প্রায় ৭০০ সদস্যও সেখানে পৌঁছেছেন। চীন : চীন থেকে আপদকালীন সাহায্য নিয়ে ৬০টি দল পাঠানো হয়েছে। পাকিস্তান : পাকিস্তান থেকে চারটি সি-১৩০ বিমান  নেপালে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। ৩০ শয্যার একটি ফিল্ড হাসপাতাল, অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকারী দল-সহ নানা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ওই বিমানগুলোর গতকাল পৌঁছার কথা।  যুক্তরাষ্ট্র : পেন্টাগনের তরফে জানানো হয়েছে, ৭০ জনের একটি দল নিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি বিমান এদিন কাঠমান্ডু   পৌঁছেছে। এ ছাড়া নেপালের অনুরোধে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং নিউজিল্যান্ডও বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে সেখানে। ব্রিটেন : নেপালকে ৫০ লাখ পাউন্ডের [(প্রায় ৫৯ কোটি টাকা, এক পাউন্ট=১১৮ টাকা)] অর্থ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এর মধ্যে জরুরিভাবে ৩ লাখ পাউন্ড ছাড় দেওয়া হয়েছে।  ইইউ : প্রাথমিকভাবে নেপালে জরুরি সাহায্য হিসেবে সাড়ে ৩২ লাখ ইউরো দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।   ইউনিসেফ : জরুরি খাদ্য হিসেবে ১২০ মেট্রিক টন খাবার পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। আসিয়ান : গতকাল মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে তিন দিনব্যাপী আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে এক বিবৃতিতে আসিয়ান রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জানান, তারা নেপালের সাহায্যে এগিয়ে আসতে চান।
স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নেপালি শিশুরা : নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ১০ লাখ শিশুর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটির মতে, ভূমিকম্প বিধ্বস্ত দেশটিতে শিশুরা পানি, বায়ুবাহিত সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া অনেক শিশু দুর্ঘটনার পর তাদের পরিবার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। এজন্য ইউনিসেফ জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য নিয়ে নেপালের শিশুদের জন্য সাহায্য পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এএফপি, বিবিসি।

সর্বশেষ খবর