মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

পেট্রলবোমা হামলার বিচার চাইলেন দগ্ধদের স্বজনরা

পেট্রলবোমা হামলার বিচার চাইলেন দগ্ধদের স্বজনরা

বিএনপির টানা তিন মাসের অবরোধ-হরতালে পেট্রলবোমা হামলার বিচার চাইলেন দগ্ধদের স্বজনরা। সেই সঙ্গে আজকের সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট না দেওয়ারও আহ্বান জানান তারা। গতকাল দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিমদের স্বজনরা দুর্দশার করুণ চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন। আয়োজক সংগঠনের নাম লেখা না হলেও দেয়ালে টাঙানো দুটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘খালেদা জিয়া আমার স্বজনকে কেন পোড়ালেন, জবাব দিন’ ‘খালেদা আমার অগ্নিদগ্ধ স্বজনদের দোহাই-আপনি আমাদের কাছে ভোট চাইবেন না’।
‘আমার সন্তান গেছে, আমি বুঝি, উনি কি বুঝবেন’ এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে পেট্রলবোমায় নিহত অভির মা নূরজাহান বেগম বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, আমার একটাই সন্তান। তাকে ঘিরেই আমার সব আশা-ভরসা ছিল। কিন্তু পেট্রলবোমা আমার সেই ছেলেটার জীবন কেড়ে নিল। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? কী জবাব দেবেন বেগম খালেদা জিয়া? তিনি বলেন, উনি তো একবার আমাদের দেখতেও গেলেন না। একবারও এসে বললেন না, আমি এই হামলা করিনি। উনার বিচার তো কেউ করবে না। আজ উনার বিচারের জন্য একমাত্র আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে গেলাম।’ এ সময় অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এর কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে নিয়ে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তার লজ্জা নাই, শরম নাই। একটা বেশরম মহিলা। আমাদের একবার দেখতেও আসে নাই। এখন সেই পোড়া মানুষের স্বজনদের কাছেই ভোট চায়। তাদের আপনারা কেউ ভোট দেবেন না। তারা অনেক খারাপ। ওদের মতো খারাপ লোক দুনিয়াতে নাই।’ এরপর পুনরায় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারপর প্রজেক্টরে ধারণকৃত অভির ঘটনার ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। নূরজাহান বেগম আরও বলেন, চোখের সামনে ছেলেটা আমার একটু একটু করে শেষ হয়ে গেল। আমি কিছুই করতে পারলাম না। ম্যাডাম জিয়ার কাছে অনুরোধ, আর কাউকে পেট্রলবোমা মেরে হত্যা করবেন না।  পেট্রলবোমায় আহত শফিউলের পিতা আলাউদ্দিন বলেন, তিন মাস ধরে আমাদের যে করুণ অবস্থা, এই অবস্থা কি দেখার মতো বিএনপির কোনো নেতাও নেই? আমরা এটার হক বিচার চাই বলে তিনিও কান্নায় ভেঙে পড়েন। পেট্রলবোমায় আহত মনু মিয়ার ছেলে আজিজুল হক বলেন, ‘আমার বাবা যখন কান্দে কান্দে কয়, বাজান এর চেয়ে মইরা যাওয়া ভালো।’ বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ খোকনের বোন সালমা বলেন, আমার ভাই ফুটপাথে জুতা বিক্রি করত। ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে বাসে বোমা হামলায় ভাইয়ের হাত ও চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এখনো তিনি বার্ন ইউনিটে। আমরা এর বিচার চাই।
আহত সালাহউদ্দিন ভূঁইয়ার স্ত্রী রুমি আক্তার বলেন, আমার স্বামী কিংবা আমরা তো কোনো রাজনীতি করি না। তাহলে আমাদের কেন এভাবে কষ্ট পেতে হবে? আহত শফিকুলের বাবা আলাউদ্দিন বলেন, আমার ছেলেটা বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছে। বাবা হয়ে এই দৃশ্য সহ্য করা কঠিন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. মাহমুদুল হাসান, ডা. তাহমিনা ও ডা. ফারজানা প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর