মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঢাকার বস্তিতে টাকার ছড়াছড়ি

বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতার ১১, সাজা ৩ জনের

ভোটের আগ মুহূর্তে ঢাকার বস্তিগুলোতে ছিল টাকার ছড়াছড়ি। ভোট কিনতে বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিয়ে নেতা-কর্মীরা ছুটেছেন বস্তিগুলোতে। ঘরে ঘরে গিয়ে টাকা বিলিয়েছেন দুই হাতে। কোনো স্থানে প্রার্থী নিজেই হাজির হয়েছেন। অনেক প্রার্থী ঝুঁকি না নিয়ে ঘনিষ্ঠ লোক দিয়ে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। রবিবার নির্বাচনী প্রচারণা যখন শেষ, মূলত তখন থেকেই বস্তিগুলোতে শুরু হয় ভোট কেনার এ মহোৎসব।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অধিকাংশই ভোট কেনার অভিযানে ছিলেন তৎপর। নির্বাচন কমিশনের কঠোর নজরদারি থাকলেও বন্ধ করা যায়নি ভোট কেনাবেচা।
জানা গেছে, বনানীর কড়াইল, মহাখালীর সাততলা বস্তি, কল্যাণপুর পোড়া বস্তি, মিরপুরের বাগানবাড়িসহ বিভিন্ন বস্তিতে টাকার ছড়াছড়িতে দুই দিন ধরে ছিল উৎসবের আমেজ। নগদ টাকা হাতে পেয়ে বস্তিবাসীর মাঝে যেন নেমে এসেছিল খুশির ‘চানরাত’। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে টাকা বিলানোর সময় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বিএনপি কর্মী বলে পুলিশ জানিয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল অংকের টাকা। এ ছাড়া তিনজন মহিলাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বস্তিবাসীর সংখ্যা প্রায় সাত লাখ। এর মধ্যে দুই সিটির ভোটার সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ। নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর এই ভোট। মেয়র প্রার্থীরাও এত বড় ভোটব্যাংক হাতছাড়া করতে রাজি নন। ফলে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বস্তিগুলো। বস্তিবাসীর ভোট আদায়ে টাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে জানান বেশ কয়েকজন প্রার্থী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটিতে বনানীর কড়াইল ও মহাখালীর সাততলা বস্তি, কল্যাণপুর পোড়া বস্তি, মিরপুরের বাগানবাড়ি ও সোবহান রোড বস্তিতেই ভোটার প্রায় ৫০ হাজার। এর মধ্যে কড়াইল বস্তিতেই প্রায় ২৬ হাজার ভোটার। প্রার্থীরা প্রতিদিনই এসব বস্তিতে প্রচারণা চালিয়েছেন। দুই দিন ধরে প্রার্থীরা বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছড়িয়েছেন দুই বস্তিতে। কল্যাণপুরে রয়েছে ছোট-বড় ১০টি বস্তি। ভোটার প্রায় সাত হাজার। বেশির ভাগই ভোলার নদীভাঙনের শিকার। ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরেরও আছেন অনেকে। পোড়া বস্তির বাসিন্দা শহীদ মিয়া জানান, ‘আমাগো বস্তির জীবন। আইজ আছি, কাইল নাই। তাই সবাই নগদ নারায়ণ চায়। তয় হোমরাচোমরা ছাড়া সাধারণ ভোটার কিছু পাইছে বলে হুনি নাই। তয় টেকা পাইলেই যে ভোট দেব, হেইডা শিউর দেওন যাইব না।’ গুলশানের এক প্রার্থী জানান, বস্তিবাসীর মধ্যে টাকা বিলানোর পরও সিওর থাকতে পারছেন না ভোট পাবেন কিনা। যদিও কোনো কোনো স্থানে শপথ করানো হয়েছে। তিনি বলেন, একজন কাউন্সিলর প্রার্থী কড়াইল বস্তিতে গিয়ে টাকা দিয়ে ভোটের শপথ করিয়েছেন। যারা করেননি তাদের ভোটার আইডি নিয়ে গেছেন।
টাকাসহ গ্রেফতার ১১ : এদিকে টাকা বিলি করার সময় পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে হাতেনাতে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। তারা প্রত্যেকেই বিএনপির নেতা-কর্মী বলে পুলিশ জানায়। ঢাকা উত্তরের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে ভোট কেনার সময় পাঁচজনকে মিরপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ তাদের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা উদ্ধার করে। ডিএমপির অতিরিক্ত ডিসি (মিডিয়া) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, রবিবার রাতে হাজারীবাগের গণকটুলী থেকে যুবদলের সহ-সভাপতি আলাউদ্দিনকে আটক করা হয়েছে। তিনি টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছিলেন। তার কাছ থেকে ২৫ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। একই রাতে রমনার চল্লিশঘর বস্তি এলাকা থেকে মাসুদকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এদিকে গতকাল ভোরে খিলক্ষেতের মধ্যপাড়া থেকে ফিরোজকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রাম মুজিবুর ঘাটে টাকা বিলানোর সময় আটক হন তিন মহিলা। তারা হলেন সেতারা, শিল্পী এবং হোসনে আরা। তাদের কাছ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর