মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামের বাজারে টাকা উড়ছে, সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

সিটি নির্বাচন ঘিরে টাকার ফোয়ারা উঠেছে। প্রধান দুই জোটের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এ নিয়ে রয়েছে সতর্কাবস্থায়।
গুঞ্জন রটেছে, চসিক নির্বাচনে ‘লগ্নি’ করছেন যুদ্ধাপরাধীরাও। বিশেষ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আর মীর কাসেম আলীর নাম এ ক্ষেত্রে আলোচিত। যুদ্ধাপরাধ বিচারবিরোধী শক্তি ভবিষ্যতে রায় ও রায়ের বাস্তবায়ন ঠেকাতে যে কোনো মূল্যেই সরকার পতনের উদ্দেশ্যে মরিয়া। আর এজন্যই চসিকসহ তিন সিটি নির্বাচনে টাকার বন্যা বইয়ে দিয়ে হলেও তারা মিত্রশক্তির বিজয় নিশ্চিত করতে চাইছে। নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্র জানায়, গতকাল টাকা বিলি হয় বিভিন্ন বস্তিতে। টাকা শুধু নগরেই নয়, নগরলাগোয়া সীতাকুণ্ড, মিরসরাইয়ের কোনো কোনো কারখানা থেকেও বিলি হয়েছে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আসাদগঞ্জের কোনো কোনো ব্যাবসায়িক দফতর থেকেও হয়েছে নগদ টাকার নির্বাচনী লেনদেন। এ নির্বাচনী টাকা এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকেও। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে আন্দরকিল্লা মোড়ে সে সময়কার বিএনপি-জামায়াত জোট প্রার্থী শামসুল আলমের পক্ষে বিতরণকালে ৪৭ লাখ টাকাভর্তি মোটরকার হাতেনাতে ধরা পড়ে। ওই ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন তোলে। ধারণা করা হচ্ছে, চসিক নির্বাচনের আগের গতকাল ‘চাঁদরাতে’ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে দেদার টাকা বিলিবণ্টন হয়। চট্টগ্রাম শহরের ৪১টি ওয়ার্ডেই চসিক নির্বাচন ঘিরে দেদার টাকার লেনদেন হয়। টাকা যায় রোহিঙ্গা ভোটার, সন্ত্রাসী, পোলিং এজেন্ট, মাঠকর্মী থেকে শুরু করে নানা ঘাটে। এরই মধ্যে অবশ্য নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে কেটলি, ফ্লাস্ক ইত্যাদি উপহারসামগ্রী দিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। নির্বাচন কমিশনে এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের হয়। রবিবার সকালে মেয়র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে অনেকটা একই সময়ে চসিক নির্বাচনে টাকার প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তোলা হয়। নাগরিক কমিটি মনোনীত হাতি প্রতীকের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, ‘ব্যবসায়ী ও বিদায়ী মেয়র মন্জুর আলম নানাভাবে টাকা ছড়াচ্ছেন ভোটের মাঠে। পোলিং এজেন্টদের কেনার চেষ্টার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাউকে কাউকেও মন্জুর টাকা দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। বস্তিতে বস্তিতে টাকা পাঠিয়ে ভোটার কেনার চেষ্টা করেছেন। তা সত্ত্বেও ভোটারদের প্রতি নিজের আস্থার কথা জানান নাছির। অন্যদিকে, পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী এম মন্জুর আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনিও অভিন্ন অভিযোগ তুলে বলেছেন, নাছিরের পক্ষে বস্তিতে বস্তিতে বিরিয়ানি পাঠানো হয়েছে। টাকার ফোয়ারা তো চলছেই।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডের (১২, ২৩, ২৪) কাউন্সিলর প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেহেনা বেগম রানু অভিযোগ করে জানান, তুমুল টাকার খেলা চলছে তার এলাকায়। প্রতিদ্বন্দ্বী একাধিক প্রার্থীর পক্ষে টাকা বিলি করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে এর আগে ফ্লাস্ক বিতরণের অভিযোগ দিয়েও কোনো বিচার মেলেনি। একইভাবে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জহরলাল হাজারীও অভিযোগ করেছেন এলাকাটিতে অন্য এক কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে টাকা বিলিবণ্টন হচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) প্রকৌশলী বনজকুমার মজুমদার বলেছেন, ‘বিভিন্ন স্থানে টাকা বিলির কথা বিভিন্নভাবে শুনছি। তবে সুনির্দিষ্ট কেউ কারও বিপক্ষে অভিযোগ দেননি। পুলিশ এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর