মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

বীজবিহীন আঙ্গুর ফলবে দেশেই

বীজবিহীন আঙ্গুর ফলবে দেশেই

আর বিদেশ নয়, দেশেই ফলবে বীজবিহীন সুস্বাদু আঙ্গুর। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নরসিংদীর শিবপুর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা বীজবিহীন আঙ্গুরের গবেষণায় সফলতা পেয়েছে। আঙ্গুর ইংরেজিতে Grape এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Vitis vinifea। যা লতা জাতীয় দ্রাক্ষালতা গাছে ফলে থাকে। দ্রাক্ষালতা গাছটি Vitaceae পরিবারের অন্তর্গত। এর রঙ কালো, নীল, সোনালি, সবুজ, বেগুনি-লাল বা সাদা হতে পারে। এটা মিষ্টি এবং উপাদেয় ফল। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও মধ্য আমেরিকা অঞ্চলে আঙ্গুরের উৎপত্তি। ভারতবর্ষে আঙ্গুরের চাষ শুরু হয় ১৩০০ সালে। শুরুতে উত্তর ভারতের কিছু অঞ্চলে শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা বিস্তৃত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এক সময় বাংলাদেশের বন জঙ্গলে ‘ঝাক্কা’ নামে এক প্রকার আঙ্গুর প্রাকৃতিকভাবে ফলত। কিন্তু ফলটি টক হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে তা বিলুপ্ত হয়। এ কারণে ‘আঙ্গুর ফল টক’ প্রবাদটি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিপর্যায়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছোট পরিসরে আঙ্গুরের আবাদ হয়, কিন্তু তা টক। যার জন্য আঙ্গুর আবাদ ও উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়নি। এ জন্য চাহিদার পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে ৯০-এর দশকে আঙ্গুর চাষের সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা করে গাজীপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্র। ওই সময় বিদেশ থেকে শতাধিক জাতের আঙ্গুরের জাম প্লাজম সংগ্রহ করে গবেষণা করা হয়। কিন্তু উদ্যোগ সফল হয়নি। গবেষক দলের সদস্য ড. নাজিরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি অব ফিলিপিনস, লস বানোস থেকে উদ্যান ফসলের উপর পিএইচডি করেন। তিনি সে দেশের আঙ্গুর উৎপাদনের পদ্ধতি ও কলাকৌশল স্বচক্ষে দেখেন। দেশে উৎপাদিত আঙ্গুর বীজসমৃদ্ধ। আঙ্গুরের বীজ ভোক্তা পছন্দ করে না। একই সঙ্গে বীজবিহীন আঙ্গুর সুস্বাদু হয়। ফলে বাজারে বীজবিহীন আঙ্গুরের চাহিদাও বেশি। তাই বীজবিহীন সুস্বাদু আঙ্গুর উদ্ভাবনে উদ্যোগী হন ড. নাজিরুল ইসলাম। তিনি ২০০৬ সালে যশোরের বিএডিসির উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রে বীজবিহীন আঙ্গুরের গবেষণা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে নরসিংদীর শিবপুর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রে পুনরায় গবেষণা করেন। গবেষণা দেখা গেছে, ফুল থেকে কুঁড়ি বের হওয়ার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জিএ-থ্রি (জিবরালিক এসিটিক এসিড) সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করার মাধ্যমে বীজবিহীন আঙ্গুর উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। এখন আঙ্গুরের আকার বৃদ্ধির জন্য গবেষণা করা হবে। ২০ এপ্রিল শিবপুর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের বীজবিহীন আঙ্গুরের গবেষণা পরিদর্শন করেছেন গাজীপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের জীব প্রযুক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দিল আফরোজ খানম, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আকন্দ ও শিবপুর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাজিরুল ইসলাম। ড. নাজিরুল ইসলাম বলেন, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে দেশের সর্বত্রই বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর আবাদ ও উৎপাদন করা সম্ভব। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিনসহ উষ্ণ আবহাওয়া মন্ডলের দেশগুলোতে এ প্রক্রিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর উৎপাদন হচ্ছে। দেশে আঙ্গুর চাষের প্রসারে আরও গবেষণার পাশাপাশি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রদর্শনী চাষ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর