বুধবার, ৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
আরও পাঁচ গণকবর

এক বন্দীশিবিরেই ৪শ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা

এক বন্দীশিবিরেই ৪শ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা

থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের গভীর জঙ্গলে আরও একটি শিবিরে পাঁচটি কবর আবিষ্কার করেছেন দেশটির তদন্ত কর্মকর্তারা। কবরগুলোয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অভিবাসীদের দেহাবশেষ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ ছাড়া সেখানকার শংখলা প্রদেশের পেদাং বেসার শহরের পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে আরেকটি বন্দীশিবির থেকে পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা নারী জানিয়েছেন, একটি বন্দীশিবিরেই ৪০০ জন রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি। এ ছাড়া পেদাং হাসপাতালে বাংলাদেশ থেকে নয় মাস আগে অপহৃত এক বাংলাদেশিও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। থাইল্যান্ড পুলিশের মুখপাত্র প্রাউত থাবর্নসিরি সাংবাদিকদের বলেন, নতুন আবিষ্কার করা গণকবর প্রথম গণকবরের কাছেই অবস্থিত। পাঁচটি কবরে কোনো দেহাবশেষ আছে কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছেন। এর আগে আরেকটি গণকবর পাওয়া যায়, যেখান থেকে অন্তত ১০ বাংলাদেশিসহ ২৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

থাইল্যান্ডের ব্যাংকক পোস্ট জানিয়েছে, নির্যাতনশিবির থেকে পালিয়ে আসা রহিমা খাতুন (২৫) নামের এক রোহিঙ্গা নারীকে পেদাং বেসার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। নির্মম নির্যাতনের শিকার রহিমা খাতুন হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আমাকে বহুবার মারধর করা হয়েছে'। এই বলে ঝরঝর করে কাঁদতে শুরু করেন রহিমা। নিজেকে রোহিঙ্গা বলে পরিচয় দিয়ে দোভাষীর মাধ্যমে তিনি জানান, তাকে মিয়ানমার থেকে আনা হয়েছে এবং প্রায় চার মাস থাইল্যান্ডের একটি জঙ্গলে এক বন্দীশিবিরে আটকে রাখা হয়। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। রহিমা জানান, ওই শিবিরে প্রায় ৪০০ জন বন্দী রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি। কিন্তু তিনি ওই বন্দীশিবিরের অবস্থান সম্পর্কে বলতে পারেননি। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, থাইল্যান্ডের যে স্থানে গণকবর পাওয়া গেছে, সেখানকারই কোনো এক বন্দীশিবির থেকে রহিমা পালিয়ে এসেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ বন্দীশিবিরে ৮০০ থেকে ১ হাজার জনকে আটকে রাখা হয়েছিল। রহিমা খাতুন বলেছেন, 'তারা বলছিল, পুলিশ আসছে। সবাই দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু আমি পারছিলাম না, কারণ আমি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম।' সবাই দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি হাঁটতে শুরু করেন। গ্রামবাসী দেখতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি হাঁটতে থাকেন। কতদূর পথ তিনি হেঁটেছিলেন, তা জানাতে পারেননি। কান্নায় ভেঙে পড়া রহিমা জানান, ওই বন্দীশিবিরে তার ১০ বছরের মেয়েও ছিল। কিন্তু এখন তিনি জানেন না, তার সন্তান কোথায় আছে। এ হাসপাতালে ২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি তুতানসাসা (ব্যাংকক পোস্টের উল্লেখ করা নাম) চিকিৎসা নিচ্ছেন। থাই-মালয়েশিয়া সীমান্তের যেখানে গণকবর পাওয়া গেছে, সেখান থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি তিনি। সোমবার থাই পুলিশপ্রধান সম্যত পুমপানমুয়াং তাকে হাসপাতালে দেখতে যান। এ সময় তিনি বলেন, এখানে ৬০ থেকে ৭০টি বন্দীশিবির রয়েছে। তুতানসাসার বরাত দিয়ে পুলিশপ্রধান বলেন, এ বন্দীশিবিরগুলোয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে পাচার হওয়াদের রাখা হতো। অনেকের আত্দীয়স্বজনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করত মানব পাচারকারীরা। তুতানসাসা বাংলাদেশের একটি চিনি কারখানায় হিসাবরক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদের মধ্যে আছেন স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলর আসান ইনতানু, বান তালো গ্রামের সহকারী হেডম্যান রর-আই সন্যালে, হেডম্যানের সহকারী আলি লামোহ এবং মিয়ানমারের নাগরিক স নিয়াং আনোয়ার (৪০)। এ ছাড়া স্থানীয় এক রাজনীতিক মানব পাচার চক্রের মূল হোতা বলে ধারণা করছে পুলিশ। তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। রোহিঙ্গা ব্যক্তির জন্য মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে আটক করা হয় আনোয়ারকে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি দক্ষিণাঞ্চলে মানব পাচারের প্রধান দালাল।

থাইল্যান্ড এখনো বাংলাদেশকে কিছু জানায়নি : একের পর এক গণকবরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিকদের লাশ পাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও এ ব্যাপারে এখনো থাই সরকার বাংলাদেশকে কিছু জানায়নি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ সম্পর্কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে সরকার থেকে কনস্যুলেট পর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ ঘটনায় ঢাকা থেকে থাইল্যান্ডে কোনো কর্মকর্তার যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস রয়েছে। রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসই বিষয়টির খোঁজখবর রাখছেন। এ ছাড়া বুদ্ধপূর্ণিমার পাঁচ দিনের ছুটিতে সেখানকার সব দফতরই বন্ধ।

 

সর্বশেষ খবর