বুধবার, ৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইউনূসের কারণে পদ্মা সেতুর ঋণ বাতিল হয়

প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এনইসি মিলনায়তনে একনেকের সভায় ‘নিমগাছি সামাজিক মৎস্য চাষ’ প্রকল্পের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার সময় তিনি এ সমালোচনা করেন। ক্ষুদ্রঋণে ব্যবসায়িক মনোভাব থাকে এবং এই ঋণ মডেলের ফাঁদে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আটকে যায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  একনেক সভার বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, সভায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ক্ষুদ্রঋণের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিব মানুষের জন্য যা লাভজনক তাতে যদি কেউ আঘাত করে, সরকার কখনো মেনে  নেবে না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষুদ্রঋণ মডেল দেওয়া হলেও, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এতে ব্যবসায়িক মনোভাব এসে পড়ে। নিজের  লেখা ‘ওরা টোকাই কেন’ বইয়ের উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এই বইয়ে জুলেখা নামের একটি বাস্তব চরিত্র আছে। তার বাড়ি আমার এলাকায়। আমি জুলেখাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে খুব শখ করে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিতে বলেছিলাম। এরপর জুলেখা পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নেয়। এর কিছুদিন পর তাকে (জুলেখা) পাঁচ হাজার টাকা ঋণের জন্য ১৬ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। আরও বলা হয়, ঋণের টাকা ফেরত না দিলে গরু ও ঘরবাড়ি নিয়ে নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে আটকে গেছে। তবে রাষ্ট্র কখনো ব্যবসায়িক মনোভাব দেখে না, রাষ্ট্রের দর্শনও অভিন্ন। আমার সরকারের মনোভাবও অভিন্ন। তাই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সরকার যখন বাঁচাতে যায়, তখন ওইসব ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। গ্রামীণ ব্যাংকের ৫৪টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে আটকে আছে। সভায় ড. ইউনূসের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ বন্ধ করার জন্য উনি (ড. ইউনূস) হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে বিশ্বব্যাংকে ফোন করিয়েছিলেন। এতে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। তিনি আরও বলেন, গরিব মানুষের জন্য লাভজনক কাজে যে বা যারা বাধা দেবে সরকার তাদের কঠোর হাতে প্রতিরোধ করবে। আওয়ামী লীগ সরকার এর আগেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করেছে বর্তমানেও করবে। এদের (প্রান্তিক) ঋণের ফাঁদে ফেলতে দেওয়া হবে না। সূত্র জানায়, গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন সিরাজগঞ্জ জেলায় স্থানীয়দের দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের কাছ থেকে ৮০০ পুকুর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়ে নানা অনিয়ম করেছে বলে সভায় উঠে আসে। ইজারার ২৫ বছর পরও এ  থেকে স্থানীয়রা উপকৃত হওয়ার বদলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। সভায় নিমগাছিতে সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষ প্রকল্প নিয়ে সরেজমিন একটি প্রতিবেদন দিতে আইএমইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একনেক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী সভায় বলেছেন, ‘১৯৯৬ সালে গ্রামীণফোন টেন্ডারে চতুর্থ ছিল। শুধু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুবিধা হবে সেই উদ্দেশে গ্রামীণফোনকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য সমালোচনা হলেও মেনে নিয়েছিলাম। কথা ছিল, জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে গ্রামীণফোন ও গ্রামীণ ব্যাংকের মধ্যে কার্যক্রম চলবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ড. ইউনূস জিপি থেকে শেয়ার বিক্রি করেছেন। যখন টেলিনর বলেছে, লিখিত দেন; তখন ইউনূস বলেছেন দেব না। এরপরই নরওয়ে টেলিভিশনে ড. ইউনূসের ওপর রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।’
সিএমএইচে বোন মেরু ট্রান্সপ্লান্টেশন সেন্টার উদ্বোধন : রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) বোন মেরু ট্রান্সপ্লান্টেশন সেন্টারের (অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন) গতকাল সন্ধ্যায় উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি সিএমএইচেরও পোস্ট অ্যানেসথেটিক কেয়ার ইউনিট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার সেন্টার, ক্যাজুয়ালেটি অ্যান্ড ইমারজেন্সি ইউনিটেরও উদ্বোধন করেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, ভারপ্রাপ্ত নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এ এম এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তারা। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থাপনাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন। সেই সঙ্গে সিএমএইচে চিকিৎসা সেবা বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এ ছাড়া তিনি আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স এবং সেনা সদর কনফারেন্স অ্যান্ড অডিটরিয়াম কমপ্লেক্সেরও উদ্বোধন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা সেনানিবাসে হাসপাতালে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, এরিয়া কমান্ডার (লজিস্টিক এরিয়া) মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান ও হাসপাতালের কমান্ডেন্ট বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দীন তাকে স্বাগত জানন।

সর্বশেষ খবর