বুধবার, ৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি

জবানবন্দিতে রোমহর্ষক তথ্য

ঢাকার আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রোমহর্ষক তথ্য দিয়েছেন জসিম উদ্দিন ওরফে আসাদ (৩০)। সোমবার রাতে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যাংক ডাকাতিতে সরাসরি জড়িত ১০ ডাকাতকে শনাক্ত করা হয়েছে। ডাকাত দলের সদস্যরা উগ্রবাদী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য। নাশকতার তহবিলসংগ্রহ করতে তারা ব্যাংক ডাকাতি করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় জসিমসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, গ্রেফতার হওয়া জসিম ব্যাংক ম্যানেজারকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে। পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতা তাকে ধাওয়া করলে সেখানে সে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় সহযোগীদের ছোড়া বোমার স্পি­ন্টার ও গুলি তার পায়ে লাগে। রক্তমাখা অবস্থায় একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে সে আশুলিয়ার শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে দুই দিন অবস্থানের পর সে পালিয়ে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে ফুফুর বাড়িতে আত্মগোপন করে। সোমবার রাতে তাকে ফুফুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। খন্দকার গোলাম ফারুক আরও জানান, আমরা নিশ্চিত হয়েছি তারা জঙ্গি সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্য ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।
জবানবন্দি : ব্যাংকে ডাকাতি ও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন জসিম উদ্দিন। গতকাল ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শাহিনুর রহমানের আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন জানান। জসিম উদ্দিনের জবানবন্দিতে ব্যাংক ডাকাতির আদ্যোপান্ত উঠে এসেছে।  জসিম উদ্দিন জবানবন্দিতে বলেন, তাদের দলনেতা মাহফুজ ওরফে আবদুল্লাহ আল বাকী। তার বাড়ি মেহেরপুরের নকলা থানার কাজাইকাটায়। আমার সঙ্গে টঙ্গীর হোসেন মার্কেটের ফ্ল্যাটে সাইফুল, সুমনের স্ত্রী ও লিটন ছিলেন। সাইফুলের বাড়ি ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে। সুমনের বাড়ি কোথায় জানি না। আমরা যে ফ্ল্যাটে থাকতাম ওখানে মাহফুজ ওরফে বাকী মাঝে-মধ্যে লিটন নামের একজনকে নিয়ে আসতেন। তার বাড়ি কোথায় জানি না। আমি আজমেরী পরিবহনে চাকরি করতাম। চাকরি চলে গেলে চন্দ্রায় ফলের দোকান দেই। এ সময় দুলাল ও রায়হানের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর শংকরপাশায়। গত ১৭ এপ্রিল সকালে মাহফুজ ওরফে বাকী আমাদের ফ্ল্যাটে এসে একটি কাজে যেতে হবে বলে জানান। তারপর সাইফুল, পলাশ, আসিফ, সুমন ও আমাকে ডাক দেন। যে ব্যাংকে ডাকাতি করতে হবে সেই ব্যাংকের একটি মানচিত্র অংকন করেন। পাশাপাশি কীভাবে ডাকাতি করতে হবে তা বুঝিয়ে দেন। ডাকাতি করার সময় ব্যাংকে ঢুকে ম্যানেজারের কক্ষে আমাকে যেতে বলেন। সাইফুলকে ক্যাশের টাকার কাছে যেতে বলা হয়। পলাশের দায়িত্ব থাকে ব্যাংকের সিকিউরিটিকে বাধা দেওয়া। সুমনকে ব্যাংকের মধ্যে ঢুকে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অস্ত্রের ভয় দেখাতে বলা হয়। মাহফুজ ব্যাংকের মধ্যে ঢুকে ক্যাশের কাছে থাকা সাইফুলের কাছে যাবে। নিচে পাহারায় থাকবে লিটন, বোরহান ও অজ্ঞাতনামা আরও দুজন। তারপর মাহফুজ ২০ এপ্রিল আমাকে এবং সাইফুল ও আসিফকে একটি করে চাকু দেয়। পলাশকে চাকুর সঙ্গে পিস্তলও দেওয়া হয়। সুমনকে চাকু ও বড় বন্দুক দেয়। মাহফুজ নিজে একটি চাকু ও পিস্তল রাখেন। এরপর আমরা যার যার মতো অস্ত্র নিয়ে আশুলিয়ায় যাই। এর আগেই আমরা বোমা তৈরি করেছিলাম। সবাই একত্রিত হয়ে ঘটনার দিন ২টা ৫ মিনিটে ব্যাংকের সামনে যাই। মাহফুজ ব্যাংকের নিচ থেকে সাইফুল, আসিফ ও আমাকে বোমা দেয়। আগের পরিকল্পনা মতো অস্ত্রগুলো সবার কাছেই ছিল। ঘটনার সময় প্রথমে আমি অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ম্যানেজারের কক্ষে ঢুকি। ক্যাশের টাকার কাছে অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ঢোকেন সাইফুল। ডানে আসিফ অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ঢোকেন। আমি বোমাটি ম্যানেজারের কক্ষের টেবিলে সুইচ অন করে রাখি। চাকুর ভয় দেখিয়ে ম্যানেজারের কক্ষ থেকে তিনিসহ তিনজনকে বের করে বলি ‘তাড়াতাড়ি নিচে শুয়ে পড়, নইলে বোমা মেরে উড়িয়ে দেব।’ এরপর পলাশ অস্ত্র নিয়ে ব্যাংকে ঢুকে চাকু দিয়ে সিকিউরিটির পেটে আঘাত করেন। আরেকজনও সিকিউরিটিকে আঘাত করেন। আসিফ চাকু দিয়ে আঘাত করেন এক ব্যাংক গ্রাহককে। বাকী চাকু দিয়ে আরেকজনকে আঘাত করেন। আমি ম্যানেজারের কাছে চাবি চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। তখন তার বুকের ডান দিকে পরপর দুটি চাকু মারি। তিনি চিৎকার দেন। পরে পলাশ এসে ম্যানেজারের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চাকু মারেন। এরই মধ্যে ব্যাংকের পাশে মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা আসে ব্যাংকে ডাকাত পড়েছে। এরপর দৌড়ে রাস্তায় গিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় উঠে পালিয়ে যাই।  

 

সর্বশেষ খবর