শনিবার, ১৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

সিলেটে চাপা পড়েছে তিন নিখোঁজ রহস্য

ঘটনাগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার যোগসূত্র ছিল বলে তখন ধারণা করা হয়েছিল। ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকার উত্তরা থেকে ‘নিখোঁজ’ হন সিলেট ছাত্রদলের নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার এবং জুনেদ আহমদ। এর ঠিক ১৪ দিন পর ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি ইলিয়াস আলী। কিন্তু ইলিয়াস নিখোঁজের পর সিলেটে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন, দিনার কিংবা জুনেদের ক্ষেত্রে তা লক্ষ্য করা যায়নি। অন্যদিকে গত ১০ মার্চ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পরও বেশ উচ্চকিত ছিলেন সিলেট বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ওই সময় ইলিয়াস নিখোঁজ বিষয়টি উঠে এলেও দিনার, জুনেদ, আনসার আলীরা থেকে গেছেন অন্তরালেই। চাপা পড়ে গেছে তাদের নিখোঁজ রহস্যের বিষয়টি।
সিলেট নগরীর উপশহরের শওকত হত্যা মামলায় জামিন নিতে ২০১২ সালের ৩১ মার্চ ঢাকায় গিয়েছিলেন ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার ও জুনেদ আহমদ। উত্তরার হোটেল রিজেন্স গার্ডেনের ৪০৪ নম্বর রুমে উঠেছিলেন তারা। ৩ এপ্রিল উত্তরা থেকেই ‘হাওয়া’ হয়ে যান দিনার ও জুনেদ। এরপর দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও খোঁজ মিলেনি তাদের। এদিকে এর ঠিক ১৪ দিন পর, ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে মধ্যরাতে নিজের গাড়িচালক আনসার আলীসহ ‘নিখোঁজ’ হন ইলিয়াস আলী। খোঁজ মেলেনি এদের কারোরই। এ ছাড়া গত ১০ মার্চ ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর গত মঙ্গলবার ভারতের মেঘালয়ে সন্ধান মিলেছে সালাহউদ্দিনের। ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার পর সিলেটজুড়ে জোর আন্দোলন গড়ে তুলেছিল সিলেট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। হরতাল, অবরোধ, মিছিল, সমাবেশ, মিলাদ, মানববন্ধনসহ লাগাতার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। এখনো ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে চলে বিভিন্ন কর্মসূচি। এদিকে সালাহউদ্দিন ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পরও বেশ উচ্চকিত ছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কিন্তু দিনার, জুনেদ কিংবা আনসার আলীর জন্য পৃথক কোনো কর্মসূচি দিতে দেখা যায়নি তাদের। তিন বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় এখন অনেকটাই অন্তরালে চলে গেছে এ তিনজনের অন্তর্ধানের বিষয়টি। কিন্তু তাদের পরিবার-পরিজন, স্বজনরা এখনো ব্যাকুল আগ্রহে তাদের পথচেয়ে প্রতীক্ষায়। ইলিয়াসের গাড়িচালক আনসার আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগম বলেন, ‘আমরা এখনো তার জন্য অপেক্ষা করে আছি। আমাদের একমাত্র মেয়ে চাঁদনি যখন বাবার কথা জিজ্ঞেস করে, তখন নীরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না।’ তিনি জানান, মাঝেমধ্যে বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ তাদের খোঁজখবর নেন। তবে ইলিয়াসের পরিবারের সঙ্গে তাদের সবসময় যোগাযোগ রয়েছে। এমনকি ইলিয়াসের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদেরকে প্রতিমাসে আনসারের বেতনের সমপরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহমদ বলেন, ‘তাদের জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত আছে। সরকার যদি আন্তরিক হয়, তবে তাদের সন্ধান মিলবে।’

সর্বশেষ খবর