শনিবার, ১৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাজধানীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট বজ্রপাতে শিশুসহ চারজনের মৃত্যু

টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগ

রাজধানীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট বজ্রপাতে শিশুসহ চারজনের মৃত্যু

রাজধানীর বেইলি রোডে গতকাল বৃষ্টির পানি জমলে দুর্ভোগে পড়েন অসংখ্য মানুষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- সোহানুর রহমান রিফাত (৬), রুমানা আক্তার রুমা (২৮) ও রহিম ভূঞা (২৫)। এদিকে শেরেবাংলা নগরে বজ্রপাতে বাদল (১৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
শিশু রিফাতের বাবা দুলাল মিয়া জানান, তারা আজিমপুর ১৮৫/৮৬ নম্বর রসুলপুরের সাইদুর রহমানের টিনশেড বাড়িতে থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। তীব্র গরমের মধ্যে বিকালে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় তার স্ত্রী ছেলেসহ গোসল করতে বাড়ির সামনে জড়ো হন। গোসল করার একপর্যায়ে হঠাৎ বজ পাতে রাস্তার পাশের একটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ ঘটে। বেশ কিছু তার পড়ে যায়। সেই তারের একটিতে পানি বিদ্যুৎতাড়িত হয়। এতে গোসল করার সময় রিফাত, তার মা জরিনা বেগম, রুমা ও পাশের বাসার ভাড়াটিয়া তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী নিশাত অচেতন হয়ে পড়ে। তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রিফাত ও রুমাকে মৃত ঘোষণা করেন। রুমার স্বামী গাড়িচালক শামসুল ইসলাম। তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে। আর রিফাত স্থানীয় অনির্বাণ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্লে গ্রুপের ছাত্র ছিল। এদিকে, গত রাত ৮টার দিকে গেণ্ডারিয়ার বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বিদ্যুৎতাড়িত হয়ে রহিম নামে এক যুবক মারাÍক আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার বাবার নাম সেলিম ভূঞা।
বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু : শেরেবাংলা নগর থানার ওসি গণেশ গোপাল বিশ্বাস জানান, গতকাল বিকালে চন্দ্রিমা উদ্যানে ক্রিকেট খেলা অবস্থায় বজ্রপাতে বাদল নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার বাবার নাম কামাল। বাদল মনিপুরীপাড়ার ৩৩ নম্বর বাড়িতে থাকত।
টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগ : জ্যৈষ্ঠের প্রথম দিন অবিরাম বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বৃষ্টির পানি আর কাদামাটিতে একাকার। এমন পরিস্থিতি বিড়ম্বনার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী, দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় অবিরাম বৃষ্টিতে নগরবাসীকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ জন্য অনেকে ওয়াসাকে দুষচ্ছেন। বলছেন, ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল। যথাসময়ে সংস্কার না করায় দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা দিন দিন বাড়ছেই।
গতকালের বর্ষণে মতিঝিল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কাকরাইল, শান্তিনগর, নয়াপল্টন, মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক, রাজারবাগ, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, পুরান ঢাকার হোসনি দালান, নাজিমউদ্দিন রোড, আগা সাদেক রোড, বংশাল,  বনশ্রী, গুলশান, শহীদনগর, মুগদা, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে যায়।
কোথাও কোথাও হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। এ ছাড়া রাস্তার পাশের দোকানেও পানি ঢুকে পড়ে। যাদের নিচ তলার বাসায় পানি ঢুকে পড়ে তাদের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। বিভিন্ন রাস্তায় জলাবদ্ধতার কারণে বিকালে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। হাঁটু পানি মাড়িয়ে চলতে হয় পথচারীদের আর যারা যাতায়াতের জন্য রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহার করেছেন তাদের দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। অনেক রাস্তায় যান চলাচলও ব্যাহত হয়। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে সিএনজি অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, প্রাইভেট কার, মিনিবাস বিকল হয়ে বিভিন্ন রাস্তায় আটকে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফুটপাথের খুচরা ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে পারছিলেন না। আর যারা খুলেছেন তাদের তেমন বেচাকেনা ছিল না।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আখতার হোসেন বলেন, এই সময়ে এমন বৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও এক থেকে দুই দিন বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সদুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি গিয়ে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিতে দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর অববাহিকায় পানির উচ্চতা কিছুটা বেড়েছে। রাজধানীর অনেক পাড়া-মহল্লার অলিগলি আবদ্ধ হয়ে পড়ে দুর্গন্ধময় পানিতে। অনেক বাসা-বাড়ির নিচ তলায় ও দোকানে পানি ঢুকে পড়ে। রাস্তায় পানি আটকে যাওয়ায় বিকাল থেকে কোথাও কোথাও দেখা গেছে দীর্ঘ যানজট। পানি আটকে যানবাহন বিকল হয়ে পড়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়।

সর্বশেষ খবর