শুক্রবার, ২৯ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
শুক্রবারের বিশেষ প্রতিবেদন

রেলের আলো পাহাড়তলীতে

রেলের আলো পাহাড়তলীতে

পূর্বাঞ্চল রেলের উন্নয়নে নতুন দুয়ার খুলতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানা। ৬৮ বছর পর এই কারখানাকে অত্যাধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে এটি পরিপূর্ণভাবে নতুন আঙ্গিকে চালু হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কারখানাটি নতুনভাবে কাজ শুরু করলে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন এবং ইঞ্জিন মেরামতসহ সব ধরনের যন্ত্রাংশের উৎপাদন দ্বিগুণ হবে। অধিক পরিমাণে ইঞ্জিনসহ ট্রেনের নিত্যনতুন যন্ত্রপাতিও তৈরি করা যাবে। বর্তমানে চলাচলকারী দুই শতাধিক ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রপাতি তৈরির একমাত্র প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়াবে এটি। এ লক্ষ্যে কারখানাটিকে আধুনিকায়নের জন্য জাপানের দাতা সংস্থা জাইকা থেকে ২১৭ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে পূর্বাঞ্চলে দুই শতাধিক ট্রেন চলাচল করছে। এতে যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে ৯৩০টি। অন্তত ৭০০ কোচ নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। বাকি ২ শতাধিক কোচ সব সময় মেরামতের মধ্যে রাখতে হয়। কোথাও কোনো সমস্যা হলে এগুলোকে কাজে লাগানো হয়। এর সবগুলোই মেরামত করা হয় পাহাড়তলীতে। এখানে এখন ২২টি ওয়ার্কসপ রয়েছে। তবে সবগুলো মেশিনের অবস্থাই বেহাল ও জরাজীর্ণ। তিনি জানান, এ অবস্থায় আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দৈনিক গড়ে অন্তত যাত্রীবাহী দুটি এবং মালবাহী চারটি কোচ বের করা সম্ভব হবে। কারখানায় কর্মরত ওয়াকেবহাল শ্রমিকরা জানান, ব্রিটিশ আমলে দেশের পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলীতে ও পশ্চিমাঞ্চলের সৈয়দপুরে বানানো হয় দুটি আলাদা রেল ওয়ার্কশপ। এ দুটিতে ছিল কোচ, ওয়াগন আর ইঞ্জিন মেরামতের সুযোগ। এরপর কেটে গেছে অর্ধশত বছরেরও দীর্ঘ সময়। কিন্তু পরিবর্তন আসেনি ওয়ার্কশপে। ইতিমধ্যে রেলের যন্ত্রপাতি আর কোচ ওয়াগনে আমূল পরিবর্তন আসায় ওয়ার্কশপ দুটিও নতুন ধাঁচে গড়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের একটি প্রতিনিধি দল রেলওয়ের ওয়ার্কশপ পরিদর্শন করে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংস্থাটি রেলওয়ের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪৭ সালে যাত্রার সময় পাহাড়তলী রেলওয়ে ওয়ার্কশপ যে অবস্থায় ছিল, এখনো তেমনই রয়েছে। এর ৪৪৯টি যন্ত্রপাতির মধ্যে ২৭১টির বয়স ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। আর ২ হাজার ১২৮টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১ হাজার ২৩৩ জন। অবস্থার উত্তরণে দ্রুত জনবল নিয়োগ, নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোসহ মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন জরুরি। এখন সেটাই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাহাড়তলী কারখানা আধুনিকায়নের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) হারুনুর রশীদ বলেন, ‘নতুন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে যাত্রীসেবা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’

সর্বশেষ খবর