বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা
জাতীয় সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব

লোকসভা রাজ্যসভা ও মোদিকে অভিনন্দন

ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পাস হওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত ধন্যবাদ প্রস্তাবে ভারতের জনগণ, লোকসভা, রাজ্যসভা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানো হয়। প্রস্তাবটি ভারতের লোকসভায় প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় সংসদে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ উপস্থিতি ছিলেন। দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে গত মঙ্গলবার কার্যদিবসের শুরুতেই চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। সরকারি দল, বিরোধী দল এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন। প্রস্তাবে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের দূরদর্শী কূটনৈতিক সাফল্যে সম্প্রতি ভারতের সংসদে স্থল সীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ভারতের জনগণ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হোক।  সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, আজ মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির সাফল্যের দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও কূটনৈতিক দক্ষতার কারণেই এ সাফল্য এসেছে। এ জন্য আজ তাকেও আমি অভিনন্দন জানাই। আমিও চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারিনি। শেখ হাসিনা পেরেছেন। যারা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিকে গোলামির চুক্তি বলেছেন এই চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের মুখে ছাই পড়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও বিলটি ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাস হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকারকে অভিনন্দন জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আপনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণেই এই সাফল্য এসেছে।’ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। ভারতের রাজ্যসভা ও লোকসভায় এ চুক্তি পাস হওয়ায় এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করায় অবশ্যই আমরা আনন্দিত। অভিনন্দন জানাই ভারতের জনগণ ও সরকারকে। তবে এই চুক্তিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের জনগণেরও অবদান রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ধন্যবাদ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও উল্লেখ করা উচিত ছিল।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ধন্যবাদ প্রস্তাবে পাঁচটি শব্দগত সংশোধনী এনে বলেন, ভারতবর্ষের মতো এত বড় দেশ প্রতিবেশী হিসেবে পাওয়ায় আমরা গর্বিত। মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এ চুক্তি বাস্তবায়নেও আমরা আবার তাদের পাশে পেলাম। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানে পররাষ্ট্রনীতি ছিল কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হবে না। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধান সংশোধন করা হয়। এরপর প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তিসহ যেসব বড় বড় অর্জন এসেছে এর কোনোটিতেই তৃতীয়পক্ষের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়নি। শেখ হাসিনার একার প্রচেষ্টায়ই সব হয়েছে।  স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যের কারণে ভারতের পার্লামেন্টে দীর্ঘ ৪২ বছর পর সীমান্ত চুক্তি বিল পাস হয়েছে। এ খবরে সমগ্র দেশবাসী খুশি হলেও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া খুশি হতে পারেননি। খালেদা জিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানালেও নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাননি। তিনি রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। নাসিম বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি করেছিল। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এলে তার সঙ্গে দেখা করেননি খালেদা জিয়া। হরতাল ডেকে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। আর এখন ভোল পাল্টে ভারতের বন্ধু বলে দাবি করছেন। স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে জাতীয় সংসদে যে আলোচনা হচ্ছে তা ভারতের লোকসভায় পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের মাধ্যমে সম্পর্কের বিরাট অগ্রগতি হয়েছে। অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে অন্য সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। দুদেশের মধ্যে চলাচলের ক্ষেত্রে যে বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করা প্রয়োজন। ভিসা সহজীকরণ অত্যন্ত জরুরি। আশা করছি নরেন্দ্র মোদির এবারের সফরে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন না হলেও সম্ভাবনা বাড়বে। কেবল তিস্তা চুক্তি নয়, আরও যেসব অভিন্ন নদী নিয়ে সমস্যা রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারেও সুরাহা হবে। ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, শেখ হাসিনা আছেন বলেই এই চুক্তি সম্পাদন হয়েছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কার্যকরী সভাপতি মাইনউদ্দিন খান বাদল বলেন, ভারতের লোকসভায় স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে ৫০ হাজার নাগরিকের নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয়েছে। ভারতের লোকসভাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাদল বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূগোল এক, নদীগুলো এক, কোনো নদীকে আপনি (মোদি) নিজের ভাবতে পারবেন না। এটা ভাবলে ভুল করবেন। তিনি বলেন, ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হতে চায়। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হবে ভারতের জন্য বড় সহযোগী দেশ। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ এর আওতায় আনা এ ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, ড. হাছান মাহমুদ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম সুজন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী ও মো. মোতাহার হোসেন।

সর্বশেষ খবর